বাংলার দর্পন
অনলাইন ডেস্ক
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও বাংলায় ভাষণ দেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বসভায় আবারও ভাষা-শহীদের রক্তে ভেজা বাংলা ভাষার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের একমাত্র সরকার প্রধান, যিনি পরপর নয়বার সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেয়ার নজির স্থাপন করেছেন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা, হত্যা, নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সমস্যা সমাধানে তিনি কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন।
জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ৭২ তম সাধারণ অধিবেশনে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে) প্রধানমন্ত্রী ওই প্রস্তাব তুলে ধরেন। বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে জাতিসংঘে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবগুলো হলো:
১. অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা।
২. অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা।
৩. জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় (safe zones) গড়ে তোলা।
৪. রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।
৫.কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
জাতিসংঘে শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেও বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংস জঙ্গিবাদ শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম, বর্ণ বা গোত্র নেই।
ধর্মের নামে যেকোনো সহিংস জঙ্গিবাদের নিন্দা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সহিংস জঙ্গিবাদ বিস্তার রোধে তৃণমূল পর্যায়ে আমরা পরিবার, নারী, যুবসমাজ, গণমাধ্যম এবং ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করেছি। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া প্রস্তাবগুলো হচ্ছে:
১. সন্ত্রাসীদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে।
২. সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে।
৩. শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক বিবাদ মীমাংসা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, কয়েক যুগ ধরে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসছে বাংলাদেশ, যারা নিজ দেশ মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার।
গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে শুরু হয় সেনা অভিযান। এরপর বাংলাদেশ সীমান্তে নামে রোহিঙ্গাদের ঢল। এ পর্যন্ত ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি।