রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনার মত নেতৃত্ব পূর্বে পায়নি বাংলাদেশ’

বাংলার দর্পন ডটকম :

‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মত নেতৃত্ব পূর্বে পায়নি বাংলাদেশ। এর আগে যতবার সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে ততবার এই ইস্যু নিয়ে রাজনীতি হয়েছে।’-বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক ও রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে এ কথাগুলো বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন,এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের যে আশা আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা অতীতে কখনো দেখিনি। আমি নিশ্চিত শুরু থেকে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করলে বিগত ৩০ বছর ধরে এই সমস্যার বোঝা বয়ে বেড়াতে হত না বাংলাদেশকে।

ড. দেলোয়ার বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাংলাদেশের পূর্ববর্তী অনেক শাসক সুযোগ হিসেবে দেখেছেন। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা লাভ বা রাজনৈতিক ভাবে ফায়দা নেয়ার জন্য এই ইস্যুকে কাজে লাগালেও সত্যিকার অর্থে মানবিক আবেদন থেকে অতীতে কিছু করা হয়নি। কিন্তু বর্তমানে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ এই সমস্যাটি পশ্চিমা বিশ্বের নজরে আনতে সক্ষম হয়েছে। আর তার মূল কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার সাহসী নেতৃত্বের কারণে এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণেই আজ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব বাংলাদেশের পাশে আছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বর্তমান সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ না সফল জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক এই চেয়ারপার্সন বলেন, আন্তর্জাতিক সকল বিষয় বিবেচনা করলে, বর্তমানে আমাদের সরকার বেশ এগিয়ে। ইতোপূর্বে কোনো সরকার জাতিসংঘ বা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই ইস্যুতে কোনো সমর্থন আদায় করতে পারেনি। কিন্তু বর্তমান সরকার পেড়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে মুসলিম দেশ, ওআইসি এবং পশ্চিমা গণমাধ্যমেরও সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। কিন্তু কাজটি মাত্র শুরু হয়েছে। এখনো অনেকদূর পথ পাড়ি দিতে হবে।

বাংলাদেশের আক্রমণাত্মক বা আগ্রাসী ভূমিকায় থাকা উচিত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা মনে করছেন মিয়ানমারকে সামরিক ভয় দেখিয়ে বা পেশি শক্তি দেখিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধান করবেন, তারা নিশ্চিতভাবে বোকার রাজ্যে বাস করছেন। রাজনীতিবিদেরা রাজনীতির স্বার্থে অনেক কথা হয়ত বলছেন। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব কূটনীতির দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন, কতটা কঠিন কাজ বেশ দ্রুত করে ফেলেছে সরকার। ‘সেফ হাউজ’ বা ‘সেফ হেভেন’ যেই কথাই বলুন না কেনো। এমন প্রস্তাব এর আগে কখনো কি কেউ উত্থাপন করেছে? অথচ মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গা তিন পক্ষের জন্যই সবচাইতে ভালো সমাধান হতে পারে এটি।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ কী জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাদের চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা এবং তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা আমাদের জন্য সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বিদেশি কোনো একটি সংস্থার প্রধান বা সদস্যকে এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। এতে করে পরবর্তীতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হলে মিয়ানমার বলতে পারবে না এরা ‘বাঙ্গালি’। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভেরিফাই করা সহজ হবে।

তিনি আরো বলেন, সেই সঙ্গে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে বজায় রেখে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায় করতে হবে। আলোচনার পথ বন্ধ করা যাবে না।

প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কড়া একটা বার্তা প্রদান করা উচিত। অতীতের মত এবারও রোহিঙ্গাদের নিয়ে কেউ রাজনীতি করলে বা করার চেষ্টা করলে তাকে কঠোর শাস্তি প্রদানের ঘোষণাটা প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেই আশা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *