তাহমিনা আমির |
ব্রিটেনে বসে দেশের রূপা ধর্ষণের খবর পড়ছিলাম। মনটা ভারী হয়ে উঠল। এমনিতে পানিতে ভেসে আসা রোহিঙ্গা শিশুর মৃতদেহের ছবিটি মন থেকে মুছে যায়নি। রোহিঙ্গা মুসলমানদের সঙ্গে মিয়ানমার যে নির্মমতা শুরু করছে তার শেষ কবে? আন্তর্জাতিক সংস্থা এই ইস্যুতে নীরব কেন? অন্যদিকে দেশের ভেতর গুম। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে কিছু লোক মানুষদের তুলে নিয়ে গুম করে ফেলছে। কী অস্থির সব খবর!
আগে আমাদের দেশে বাসে ধর্ষণ হয়নি কখনো। ২০১৪ সালে এই ঘটনার শুরু। ওই বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরপর নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে মনে হচ্ছে, হলুদে-বিয়েতে ভাংরা নাচের মতন আমাদের দেশে বাসে ধর্ষণ সংস্কৃতি হয়ে যাবে না তো!
মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আর বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র থেকে বন্যার পানির সঙ্গে নতুন বিপদ এল নতুন আইডিয়া নিয়ে! রাস্তাঘাটে মেয়েদের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা ইয়াবা সেবনকারী ধর্ষক।
কয়েক দিন আগে লামিসা নামের এক মালয়েশিয়ান ভদ্রমহিলার সঙ্গে পরিচয় ও আলাপ হলো। স্লিম, শ্যামলা। তিরিশ বছর ধরে লন্ডনে আছেন।
লামিসা ছোট ছেলেকে মার্শাল আর্ট স্কুলে নিয়ে যেতেন। ছেলের জন্য ক্লাসের বাইরে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। তাই নিজেই সেই ক্লাসে ভর্তি হয়ে গেলেন। এখন নিজেই ব্ল্যাক বেল্টের অধিকারী। তার ১৫ বছরের মেয়ে কুকুর নিয়ে পার্কে হাঁটতে যায়। একদিন ফেরে কাঁদতে কাঁদতে। মা, আমাকে এক লোক বাজে কথা বলেছে ও ‘এফ’ দিয়ে শুরু বাজে শব্দ বলেছে।
লামিসা মেয়েকে নিয়ে পরদিন পার্কে যান। ওই লোকের সঙ্গে দেখা হয়। ওই লোক একই এলাকায় থাকে। লামিসা তাকে সাবধান করেন ও মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। সেই লোক ক্ষমাতো দূরের কথা, উল্টো গালাগাল দিয়ে লামিসার দিকে তেড়ে আসে। লামিসা দুই কিকে তাকে ধরাশায়ী করে ফেলেন। সেই লোক রক্তমাখা শরীর নিয়ে পুলিশের কাছে যায়। লামিসা প্রমাণ করে এটা তার সেল্ফ ডিফেন্স ছিল। এই শিক্ষা অবচেতন মনেও তার শরীরকে প্রটেক্ট করে। আত্মরক্ষা। পুলিশ কেস নেয়নি। উল্টো সেই লোককে ওয়ার্নিং দিল। পুলিশ দেখল আগেও মানুষকে অ্যাবিউজ করার রেকর্ড আছে তার।
রাষ্ট্র যখন মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে বিফল হয়, প্রতিটি মেয়ে শিশুর মার্শাল আর্ট শেখা উচিত। যাতে জালিমের সঙ্গে সে লড়তে পারে। পর্দা-হিজাব দিয়ে ধর্ষণ ঠেকানো যাবে না। তনু হত্যা তার প্রমাণ।
শুধু মেয়ে কেন? ব্রিটেনের এক পত্রিকায় পড়েছিলাম, পার্কে নির্জন রাস্তায় বালকদের তুলে নিতে বা উত্ত্যক্ত করতে এক দল পারভার্ট সব সময় সক্রিয়। এক পার্কে এক লোক এক বালককে যৌন আক্রমণ করে। ছেলেটির সেল্ফ ডিফেন্স জানা ছিল। সে নিজেকে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয়।
আসুন, আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশলগুলো শেখাই এবং নিজেরাও শিখি। প্র্যাকটিক্যাল কোনো শিক্ষাই বিফলে যায় না। এই আত্মরক্ষার কৌশলের শিক্ষা মন ও শরীরকে ভালো রেখে নিজেকেও রক্ষা করবে মানুষ নামের হায়েনার হাত থেকে। বনে হিংস্র পশু নেই, অন্ধকারে শয়তান নেই—সব মানুষের মনে বসত গড়ছে। তাদের প্রতিহত করতে দুর্বল হলে চলবে না।
বাংলাদেশের ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি।
তাহমিনা আমীর: লন্ডন, যুক্তরাজ্য।