ঢাকা, ১৯ জুন ২০১৭: দেশের সব অনলাইন গণমাধ্যমকে নিবন্ধিত হতে হবে এবং সম্প্রচার মাধ্যমের (বেতার, টেলিভিশন) মতো অনলাইন গণমাধ্যমও দেখভাল করবে সম্প্রচার কমিশন। তবে কমিশন না হওয়া পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন আইন দ্বারা এসব গণমাধ্যম দেখভাল করা হবে।এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা সোমবার মন্ত্রী সভায় অনুমোদন করা হয়। নীতিমালা অনুমোদন দেয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম(বিএমএসএফ)। এক বিবৃতিতে বিএমএসএফ কেন্দ্রীয় সভাপতি শহীদুল ইসলাম পাইলট ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর বলেন অনলাইন মালিকপক্ষ ও কম‘রত সাংবাদিকদের দাবীর প্রেক্ষিতে নীতিমালাটি প্রণীত হলো। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।বিবৃতিতে বলা হয় দেশে চলমান ৫৭ ধারাকে অবিলম্বে পরিবত‘ন অথবা বাতিল করে যুগোপযোগি আইন প্রণয়ন করা সময়ের দাবী।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, গণমাধ্যম নীতিমালার আলোকে এটা করা হয়েছে। অনলাইন গণমাধ্যমে কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। তবে মুদ্রিত পত্রিকা বা টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণ চালাতে নতুন করে নিবন্ধন নিতে হবে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৯৩ সালের প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস অ্যাক্ট অনুযায়ী যারা নিবন্ধন নিয়েছে, তাদের নতুন করে আর নিবন্ধন নিতে হবে না। তবে পত্রিকা ও টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণ চালাতে হলে কমিশনকে তা অবহিত করতে হবে।
তিনি বলেন, নতুন করে প্রায় ১৮০০ অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের আবেদন করেছে। সম্প্রচার কমিশন গঠিত হবে জাতীয় সম্প্রচার আইনের অধীনে, যা প্রণয়নের কাজ চলছে। জাতীয় সম্প্রচার কমিশন অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জন্য ‘গাইডলাইন’ তৈরি করবে। বিজ্ঞাপনের হার ও ফি সে অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। আর কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় অনলাইন সংবাদমাধ্যমের দেখভাল করবে।
তিনি বলেন, অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের জন্য কমিশনে নির্ধারিত ফি দিতে হবে। তবে
ফি’র পরিমান সব দিক বিবেচনা করার জন্য বিএমএসএফ মন্ত্রনালয়কে ভেবে চিন্তে নিধা‘রনের দাবী করেন।
অনলাইন গণমাধ্যমের সংজ্ঞার বিষয়ে জানাতে চাইলে শফিউল বলেন, বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড থেকে বাংলা, ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে রেডিও, টেলিভিশন বা সংবাদপত্রের প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি লেখা ও মাল্টিমিডিয়ার অন্য কোনো রূপে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারকারী বাংলাদেশি নাগরিক বা বাংলাদেশি নিবন্ধিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে ‘অনলাইন গণমাধ্যম’ বোঝাবে।
তিনি বলেন, যেসব অনলাইন চলছে সেগুলো যদি প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস অ্যাক্ট অনুযায়ী নিবন্ধন নিয়ে থাকে তা বহাল থাকবে। যারা এ নিবন্ধন নেয়নি তাদের নতুন করে নিবন্ধন নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী অনলাইন গণমাধ্যমকেও তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারে বেশকিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের ভাষণসহ সরকার অনুমোদিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করতে হবে। অশ্লীল, হিংসাত্মক, সন্ত্রাসমূলক ও দেশীয় সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী কোনো তথ্য-উপাত্ত বা দৃশ্য প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করা যাবে না।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন তথ্য ফাঁস করা যাবে না। ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত সৃষ্টি করতে পারে, আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে উৎসাহ প্রদান করতে পারে এবং আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করে এমন ধরনের তথ্য ও উপাত্ত প্রচার করা যাবে না।
এছাড়া সশস্ত্র বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত দায়িত্বশীল অন্য কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ, বিদ্রূপ বা অবমাননা করা যাবে না। অপরাধ নিবারণ ও নির্ণয়ে অথবা অপরাধীদের দণ্ড বিধানে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের হাস্যকর করে এবং তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে এমন তথ্য প্রচার করা যাবে না।