লালবাগের কেল্লা থেকে হাশেমের বাড়ি উচ্ছেদের নির্দেশ

 

ঢাকা : রাজধানীর ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লার সীমানার ভেতরে থাকা আবুল হাশেমের বাড়িটি আগামী ৩মাসের মধ্যে ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে মূল্য অনুসারে তাকে ৪০ লাখ টাকা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার এ সংক্রান্ত এক রিটের রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।

আদালতে উপস্থিত ছিলেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এসময় তিনি লালবাগ কেল্লার বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকসহ বিশেষজ্ঞদের জরিপ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।

এর আগে গত ৬ এপ্রিল লালবাগ কেল্লার প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করতে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।

একইসঙ্গে সীমানা নির্ধারণ করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন গত ২৫ মে আপিল বিভাগে দাখিল করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। জরিপকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মনোনীত প্রতœতত্ত্ব বিভাগের একজন শিক্ষক ও ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সহায়তা নিতে বলেছিলেন আদালত। লালবাগ কেল্লার ভেতরে অবস্থিত একটি বাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত মামলার রিভিউ আবেদন শুনানির পর এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

‘মনজিল মোরসেদ বনাম হাজী মো. আবুল হাশেম ও অন্যান্য’ মামলাটির সিভিল রিভিউ পিটিশন আপিল বিভাগের শুনানিতে মনজিল মোরসেদ ঢাকা জেলা প্রশাসকের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

মনজিল মোরসেদ বলেন, ২০১৫ সালের ৫ মার্চ প্রস্তুতকৃত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোগল আমলের নকশা ও ১৯০৯ সনের গেজেট পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে লালবাগ দূর্গের জন্য সংরক্ষিত ভূমির সীমানা আয়তাকার। কিন্তু সিএস রেকর্ড প্রস্তুতের সময় অদৃশ্য কারণে নকশায় আয়তাকার স্থানটিকে পশ্চিম দিকে অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে। নথিপত্রে এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি। এমনকি লালবাগ দূর্গের কোনো ভূমি হস্তান্তর হয়েছে মর্মে কোনো তথ্য সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপস্থাপন করতে পারেনি। সে কারণে সহজেই বোধগম্য হয় যে লালবাগ দূর্গের আয়তাকার ভূমির মধ্যে পশ্চিম পাশ থেতে বেশ কিছু ভূমির অনুপ্রবেশ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, হাজী আবুল কাশেম কর্তৃক দাবিকৃত জায়গাটি লালবাগ কেল্লার প্রকৃত সীমানার মধ্যে অবস্থিত। হাইকোর্টের এর আগের দেওয়া রায় অনুযায়ী আয়তাকার স্থানে দখলকৃত জায়গাটিতে অবস্থিত দুটি ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে।

বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ বলেন, সিএস রেকর্ড থেকেই এই জমির মালিকানা আবুল হাশেমদের রয়েছে। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ বলেন, প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ হওয়া উচিত।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর হাইকোর্ট এক রায়ে লালবাগ দূর্গের মধ্যে অবস্থিত অবৈধ সকল স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। সেই রায়ের রিভিউ শুনানি শেষে আদালত আজ বৃহস্পতিবার কেল্লা থেকে হাশেমের বাড়ি ভাঙার নির্দেশ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *