মূর্তি ও ভাস্কর্য সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি কী ?

বাংলার দর্পন ডটকম :
ছবি,ভাস্কর্য, মূর্তি ইত্যাদিকে ইসলাম দুভাগে ভাগ করে। এক. প্রাণীর ছবি। দুই. প্রাণহীন বস্তুর ছবি। প্রাণীর ছবি, ভাস্কর্য, মূর্তি একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত তৈরী করা যাবে না। প্রদর্শন করা যাবে না। স্থাপন করা যাবে না। হাদীসে এসেছে
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. একদিন সফর থেকে ফিরে আসলেন। আমি একটি পর্দা টানিয়েছিলাম। যাতে প্রাণীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছবি ছিল। রাসূলুল্লাহ সা. যখন এটা দেখলেন, ক্রোধে তার মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে আয়েশা! কেয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি তার হবে, যে আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য নির্মাণ করে।’ অতপর আমি সেটাকে টুকরো করে একটি বা দুটি বালিশ বানালাম।
আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. আমাকে নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন যে, ‘কোন প্রতিকৃতি রাখবে না। সবগুলো ভেঙ্গে দেবে। আর কোন উচু কবর রাখবে না। সবগুলো সমতল করে দেবে।’
আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ঘরে কুকুর ও প্রতিকৃতি আছে সেখানে ফেরেশ্তা প্রবেশ করে না।’
প্রাণী ব্যতীত যে কোন বস্তুই হোক তার ছবি, ভাস্কর্য, মূর্তি ইত্যাদি অংকন, নির্মাণ, স্থাপন ও প্রদর্শন করা যাবে। কারণ, হাদীসে যে সকল নিষেধাজ্ঞার কথা এসেছে তার সবই ছিল প্রাণীর ছবি বিষয়ে।
কেহ যদি কোন ফুল, ফল, গাছ, নদী, পাহাড়, চন্দ্র, সুর্য, ঝর্ণা, জাহাজ, বিমান, গাড়ী, যুদ্ধাস্ত্র, ব্যবহারিক আসবাব-পত্র, কলম, বই ইত্যাদির ভাস্কর্য তৈরী করে সেটা ইসলামে অনুমোদিত।
ভাস্কর্য-মূর্তি সম্পর্কে ইসলাম কঠোর কেন?
যতগুলো পৌত্তলিকতা বিরোধী ধর্ম আছে তার মধ্যে ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ ও পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে সবচে সোচ্চার। পৌত্তলিকতা মানে এক কথায় বলা যায়, মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি মারাত্নক অবিচার। ক্ষমার অযোগ্য অন্যায়। তার প্রভুত্বকে A¯^xKvi করে তা অন্যকে প্রদান। তার প্রাপ্য উপাসনা-কে অন্যকে নিবেদন করা। অবশ্য যারা ভোগবাদী দর্শনে বিশ্বাসী, সৃষ্টিকর্তা ও পরকাল যাদের কাছে গুরুত্বহীন, তাদের কাছে পৌত্তলিকতা আর একত্ববাদ কোন বিষয় নয়। এটা কোন আলোচ্য বিষয় হওয়ার যোগ্যতাই রাখে না। তারা আমার এ কথাগুলো থেকে কোন কিছু বুঝতে পারবেন না।
ছবি, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য আর মূর্তি-কে ইসলাম পৌত্তলিকতার প্রধান উপকরণ মনে করে। শুধু মনে করা নয়, তার ইতিহাস, অভিজ্ঞতা স্পষ্ট। শুধু ইসলাম ধর্ম যে পৌত্তলিকতাকে ঘৃণার চোখে দেখে তা নয়। বরং আরো দুটি একেশ্বরবাদী ধর্ম ইহুদী ও খৃস্টানদের কাছেও তা ঘৃণিত। আর এ পৌত্তলিকাতর সূচনা হয়েছিল ছবি বা প্রতিকৃতির মাধ্যমে। ইতিহাসটা এ রকম, আদম আ. এর চলে যাওয়ার অনেক পরের ঘটনা। তখন সকল মানুষ ছিল একেশ্বরবাদী। এক আল্লাহর প্রভুত্ব ও উপাসনায় বিশ্বাসী। সে সমাজের পাঁচ জন অত্যন্ত জনপ্রিয় সৎ মানুষ মারা গেল। সমাজের লোকেরা শোকে একেবারে ভেঙ্গে পড়ল। সর্বদা তাদের আলোচনা ও তাদের জন্য শোক প্রকাশ করতে থাকল। শয়তান এ পরিস্থিতির সুযোগ নিল। সে একজন বৃদ্ধ মানুষের আকৃতিতে তাদের কাছে এসে বলল, যারা চলে গেছেন তারা খুব ভাল মানুষ ছিলেন। তোমরা কয়েকদিন পরে তাদেরকে ভুলে যাবে। একটা কাজ করা যায়, আমি তাদের ছবি একে দেই। তারা যেখানে বসবাস করত তোমরা ছবিগুলো সেখানে টানিয়ে রাখবে। তাহলে তোমরা ও তোমাদের পরবর্তিরা তাদের ভুলে যাবে না। সমাজের লোকেরা তাতে সম্মত হল। তারা বলল, খারাপ কি! প্রস্তাবটা ভাল। আমাদের পূর্বপুরুষদের আমরা স্মরণে রাখব এ ছবির মাধ্যমে। শয়তান পাঁচ জনের ছবি অংকন করে দিল। তারা তাদের বসবাসের স্থানে টানাল। এ প্রজন্ম চলে গেলে পরবর্তী প্রজন্ম আসল। তারা ছবিগুলোকে উন্নত ও অধিকতর স্থায়ী করার লক্ষ্যে সেগুলোকে মূর্তিতে রূপান্তর করল। কিন্তু তারা এগুলোর পূজা বা উপাসনা করত না। এ প্রজন্ম চলে গেল। আসল পরবর্তী প্রজন্ম। তারা এসে এ মূর্তিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে থাকল। এরপর অন্য প্রজন্ম এসে সরাসরি এগুলোর উপাসনা শুরু করে দিল। এ হল মানব সমাজে মূর্তি পুজা, পৌত্তলিকতা ও শিরক প্রবর্তন করার ইতিহাস।
এটা হল আল-কুরআনের তাফসীর ও হাদীসে বর্ণিত ইতিহাস। কারো কাছে কুরআন ও হাদীস ভাল না লাগলে তিনি ইহুদী ও খৃস্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করে এ ঘটানার সত্যাসত্য জেনে নিতে পারেন। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি!
এ ইতিহাসে আমরা দেখতে পেলাম মূর্তিগুলো যারা নির্মাণ করেছিল তারা কিন্তু উপাসনার উদ্দেশ্যে করেনি। এমনিভাবে যারা ছবি অংকন ও টানিয়ে রাখার অনুমোদন দিয়েছিল, তারাও পূজা করার নিয়্যত করেনি। কিন্তু শয়তান তাদের এ কাজটিকে তাদের কাছে সুশোভিত করেছে।
ছবি ও ভাস্কর্যের পথ ধরেই যুগে যুগে পৌত্তলিকতার আগমন ঘটেছে। আর এ পৌত্তলিকতার অন্ধকার থেকে তাওহীদের আলোতে নিয়ে আসার জন্য আল্লাহ যুগে যুগে নবী ও রাসূলদের পাঠিয়েছেন। আজীবন তারা এ পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। অনেকে জীবন দিয়েছেন। অনেকে দেশ থেকে বিতারিত হয়েছেন। এ জন্যই ইসলাম ও অন্যান্য একেশ্বরবাদী ধর্মগুলো মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে সোচ্চার। এবং এ মূর্তিপুজা ও পৌত্তলিক সংস্কৃতির বিরোধিতা করা তাদের ধর্মের একটি বড় পরিচয়।
যদি পূজা উপাসনার জন্য মূর্তি নির্মিত না হয় তবুও?
অনেকেই মতামত দিয়ে দেন। বলেন, এ ছবি, এ প্রতিকৃতি, এ ভাস্কর্যতো পূজা করার জন্য নয়। এতে দোষের কী?
দোষের কিছু আছে কিনা তা জানতে প্রশ্ন করা দরকার, আপনি ছবিটা কেন টানাবেন, অর্থ, শ্রম, সময় ও মেধা খরচ করে ভাস্কর্যটা কেন নির্মাণ করবেন? কেন তা উম্মুক্ত স্থানে স্থাপন করবেন? মূর্তিটা কেন বানাবেন?
এর উত্তর হতে পারে একাধিক। যেমন
(ক) মূর্তিটি যার বা প্রতিকৃতিটি যার, তাকে স্মরণীয় করে রাখতে এ কাজটি আমরা করে থাকি।
ভাল কথা, সে ভাল মানুষ, তাকে স্মরণীয় করে রাখা হোক এটা ইসলাম অনুসারীরাও চায়। কিন্তু তাকে স্মরণীয় করে রাখতে এ পদ্ধতি ব্যতীত অন্য কোন পদ্ধতি আছে কিনা? যদি বিকল্প থাকে, তাহলে যা ইসলাম পছন্দ করে না এমন পদ্ধতিটা Aej¤^b করতে আমরা বাধ্য কেন? কে আমাদের বাধ্য করে? কে আমাদের প্ররোচিত করে?
এ পদ্ধতিতে তাকে স্মরণীয় করে রাখতে অন্য মানুষের কোন কল্যাণ আছে কি না? যদি না থাকে তাহলে আমরা এমন অনর্থক কাজ কেন করব যা মৃত মানুষকে কোন কল্যাণ দেয় না। যা জীবিত মানুষের কোন উপকারে আসে না? তার নামে একটি হাসপাতাল, একটি ইয়াতীম খানা, একটি নলকূপ, একটি রাস্তা, একটি স্কুল নির্মাণ ইত্যাতি জনহিতকর কাজ করেও তাকে স্মরণীয় করে রাখা যায়। এতে তারও কল্যাণ, আর অন্যান্য মানুষেরও কল্যাণ। এ ভাল পদ্ধতি বাদ দিয়ে আামরা খারাপ পদ্ধতি গ্রহণ করব কার নির্দেশে?
(খ) মূর্তিটি যার, তাকে সম্মান ও ভালবাসা জানাতে তার ভাস্কর্য নির্মাণ করে থাকি।
ভাল কথা তার প্রতি সম্মান জানাতে ইসলাম অনুসারীরাও চায়। কিন্তু এ সম্মানের প্রদ্ধতিটা ইসলাম বিরোধি হতে হবে কেন? সম্মান প্রদর্শনের ব্যবস্থা এমন পদ্ধতিতে হওয়া দরকার যাতে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এতে অংশ নিতে পারে।
আর মূর্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শনই হল মূর্তি পূজা। যারা মূর্তিকে পূজা করে, তারাও তো এ সাকার মূর্তির মাধ্যমে অনুপস্থিত সত্তার প্রতি সম্মান করে। মূর্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শনতো একটি বিশেষ ধর্মের ধর্মীয় রীতি।
যদি বলা হয়, আসলে মূর্তির প্রতি আমাদের সম্মান নয়। শ্রদ্ধা প্রদর্শন নয়। তার প্রতি আমাদের ভালবাসা নেই। বরং এটা হল যার মূর্তি তারই জন্য।
তা হলে আমি বলব, যে মূর্তির প্রতি আপনাদের কোন শ্রদ্ধা নেই, ভালবাসা নেই, কেহ সে মূর্তিটা ভাঙ্গতে চাইলে আপনাদের ব্যাথা লাগে কেন? এ ব্যাথা লাগার অনুভূতিই প্রমাণ করে আসলে আপনাদের ভালবাসা ও সম্মান মূর্তির জন্য নিবেদিত। এটাই তো স্পষ্ট মূর্তিপূজা। ভাবতে আশ্চর্য লাগে, কত বড় মূর্খতা ও জাহেলিয়াত। একটি মূর্তি যা মানুষের কোন কল্যাণে আসে না বরং পরোক্ষভাবে অকল্যাণই করে, তার প্রতি সম্মান ও ভালবাসা দেখাতে যেয়ে জীবিত, সমাজে সম্মানিত মানুষগুলোকে অপমান করা হয়, তাদের অমানুষ ভাবা হয়। তাদের নির্মূল করার ও উচ্ছেদ করার হুমকি ধমকি দেয়া হয়। তাদের প্রতিরোধ করতে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। এর চেয়ে মূর্তি পূজার বড় দৃষ্টান্ত আর কী হতে পারে? কোন্ আদর্শ মূর্তির প্রতি আপনাদের এ সীমাহীন ভালবাসা সৃষ্টি করেছে? একটু ভেবে দেখবেন কী? এটা তো অন্ধকার যুগের সংস্কৃতি। ইবরাহীম আ. তার পিতা ও সমপ্রদায়কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা এ মূর্তিগুলোর সামনে অবস্থান কর কেন?’ তারা বলল, ‘আমাদের পূর্ব-পুরুষদের এ রকম করতে দেখেছি।’ ইবরাহীম বলল, ‘যদি তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা স্পষ্ট ভ্রান্তিতে থাকে তবুও তাদের অনুসরণ করবে?’
যারা এখনও এগুলো করে তাদের কাছে এ কাজের সমর্থনে এর চেয়ে ভাল কোন জওয়াব নেই।
(গ) বলা হতে পারে মূর্তির প্রতি সম্মান বা ভালবাসা প্রদর্শন উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হল আমাদের জাতীয় পরিচয়, দেশজ সংস্কৃতি তুলে ধরা।
ভাল কথা, জাতীয় পরিচয়, দেশজ সংস্কৃতি তুলে ধরতে সকল জাতির ও সব দেশের লোকেরাই চায়। এটা দেশ প্রেম- সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশীদের সংস্কৃতি মূর্তির মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে এটা কোন সংস্কৃতির প্রকাশ। আমাদের সংস্কৃতিতে মূর্তি গড়ার সংস্কৃতি কোথায়? এটা ভারতের সংস্কৃতি হতে পারে বাংলাদেশের নয়। কাজেই যা আমাদের নয়, তা আমাদের বলে চালিয়ে দেয়া তো অন্যায় কাজ। আলোচিত লালন মূর্তির নির্মাতা মৃণাল হককে বিবিসি থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ওটা নির্মাণ করতে বিমান বন্দর চত্বর কেন বেছে নিলেন? তিনি উত্তরে বললেন, ‘বাহির থেকে মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করেই যেন আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে একটা ধারনা পেয়ে যায়। এ জন্য ঐ স্থানটিকে বেছে নেয়া।’
কত চমৎকার জওয়াব! বাহির থেকে মানুষ এসেই যেন ধারনা করে বাংলাদেশী সমাজ ও সংস্কৃতি হল একটি পৌত্তলিক সংস্কৃতি। এরা শুধু একতারা দোতারা সেতারা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। মৃণালের কথায় প্রমাণ, এটা ছিল বাংলাদেশী জাতির উপর চাপিয়ে দেয়া একটি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।
কিন্তু তারা এতটুকু ভাবল না, এ দেশে সংখ্যাগরিষ্ট ধর্মপ্রাণ মানুষেরা যতবার এটা দেখবে ততবার অভিশাপ দেবে। এ স্থান থেকে হাজার হাজার হজ যাত্রী পৌত্তলিকতা ও মূর্তি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে দিতে মূর্তিমুক্ত পবিত্র মক্কার উদ্দেশ্যে হজ করতে যায়, উমরা করতে যায়। আবার এ পথেই ফিরে আসে। এটি তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবে মারাত্নকভাবে।
একটি ভাস্কর্য যতই সুন্দর হোক, তা যদি ইসলামী সংস্কৃতির কোন পরিচয় বহন করে তাহলে তা ভারত বা আমেরিকা তাদের দেশের উম্মুক্ত স্থানে স্থাপন করতে দেবে না। তারা বলবে, ‘এটি সংখ্যাগরিষ্ট জনগনের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’ বাংলাদেশে কেন এমন ভাস্কর্য স্থাপিত হবে, যা এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে? যা একশ ভাগই একটি পৌত্তলিক গোষ্ঠির সংস্কৃতির অংশ।
যে সকল মুসলিম পরিচয় দানকারী ব্যক্তিরা এ মূর্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, কোন বিষয়টি ইসলামের প্রতি আপনাদের এত বিদ্বেষী করে তুলল? কেন ইসলামী সংস্কৃতির প্রতি আপনারা এত শত্রুতা পোষন করেন?
আপনার যদি মনে করেন এ দেশের ইসলামের ধারক বাহক ও প্রচারকরা ইসলাম বুঝে না তাহলে আপনারা কেন ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করেন না। কেন কুরআন ও হাদীস নিয়ে গবেষণা করেন না। আপনারা কত কিছুই তো পারেন। এ কাজটি কেন করতে পারেন না?
আপনারা অনেকে বলেছেন, ইরানে মূর্তি আছে, ইরাকে আছে, লিবিয়াতে মূর্তি আছে, ইন্দোনেশিয়াতে মূর্তি আছে। আরো অনেক মুসলিম দেশে আছে। তাহলে আমাদের দেশে থাকলে ক্ষতি কী?
ভাল কথা। মুসলিম দেশে কোন খারাপ বস্তু থাকলে সেটা গ্রহণ করা যায়, কিন্তু কোন ভাল বিষয় থাকলে তা গ্রহণ করা যায় না। সেটা যতই জনকল্যাণ মূলক হোক। এটাই মনে হয় আপনাদের মূলনীতি। অনেক মুসলিম দেশে শরীয়াহ আইন চালু আছে। অনেক মুসলিম দেশে ইসলামি পারিবারিক আদালত আছে। অনেক মুসলিম দেশে সূদী কারবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেক মুসলিম দেশে সেকুলার শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। অনেক মুসলিম দেশ বৃটিশ প্রবর্তিত আইনে চলে না। এগুলো গ্রহণ করা যায় না। গ্রহণ করার কথা বলাও অপরাধ। আর মুসলিম দেশে যদি ইসলাম পরিপন্থী কিছু থাকে তাহলে সেটা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। আপনাদের ব্যাপারে কী তাহলে আল্লাহর সে বাণীই প্রযোজ্য, যেখানে তিনি বলেছেন ঃ
وَإِنْ يَرَوْا سَبِيلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا وَإِنْ يَرَوْا سَبِيلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا بِآَيَاتِنَا وَكَانُوا عَنْهَا غَافِلِينَ
“তারা সঠিক পথ দেখলেও তাকে পথ হিসাবে গ্রহণ করবে না। আর ভ্রান্ত পথ দেখলে পথ হিসাবে গ্রহণ করবে। এটা এ জন্য যে, তারা আমার আয়াতসমূহ A¯^xKvi করেছে এবং সে সম্পর্কে তারা ছিল অমনোযোগী।”
এটা কোন ধরনের মানসিকতা? নিজেকে প্রশ্ন করুন! আল-কুরআনের ভাষায় ‘তারা নিজেদের প্রবৃত্তিকে প্রভূ বানিয়ে নিয়েছে।’ আপনি তাদের মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন কি না, একটু ভাবুন! দুনিয়ার সকল ইসলামি ধর্মীয় নেতারা যে বিষয়ে ঐক্যতম পোষণ করেছেন, তার বিরোধিতা করলে মুসলিম থাকে কিনা সেটাও ভাবার বিষয়। আমরা ইসলামকে যথাযথভাবে মানতে পারি না। জানতে চাই না। সেটা আমাদের সীমাবদ্ধতা, আমাদের দুর্বলতা। আল্লাহ এ অপরাধ হয়তো ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু ইসলামের বিরোধিতা করতে হবে কেন? ইসলামী অনুশাসনের সাথে বৈরীতা পোষণ করতে হবে কেন? তা হলে আল্লাহর কাছে আমরা কী অজুহাত পেশ করব? এ প্রশ্ন করে আপনাদের বিবেকের দরজায় নাড়া দিতে চেষ্টা করলাম।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
“আর নিজের কাছে সত্য পথের দিশা প্রকাশ হওয়ার পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফিরিয়ে দেব যে দিকে সে যেতে চায় এবং প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসাবে তা খুবই মন্দ।”
-সংগৃহীত
Related News

হেফাজতের সহকারি মহাসচিব মুফতি রহিম উল্লাহ কাসেমীর ইন্তেকাল
ফেনী’ প্রতিনিধি : ফেনী লালপোল সোলতানিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস, গুণক দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতাRead More

আল্লামা আহমেদ শফির দাফন সম্পন্ন
আল্লামা শফির জানাজায় দুই লক্ষাধিক মুসল্লি | বাংলারদর্পণ হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর দাফনRead More