বোয়ালমারীতে আ.লীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষ আহত-৫০, আটক ৮, বাড়িঘর ভাঙচুর

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্তু দফায় দফায় উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের পরমেশ্বরদী খাল পাড়া ও কাজিপাড়ায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ২৫-৩০টি বাড়িঘর ও দোকান ভাঙচুর হয়েছে। সংঘর্ষে ৬জন পুলিশসহ উভয় পক্ষের ৪০-৫০জন আহত হয়েছে।

আহতদের মধ্যে আছাদ শেখ (৪০) নামে একজন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। উভয় পক্ষের বাকি আহতরা বিভিন্ন মামলার আসামি থাকায় বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে পলাতক রয়েছে।

খবর পেয়ে বোয়ালমারী ও সালথা থানার পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় দুইপক্ষের সংঘর্ষ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সর্টগানের গুলি নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেন। ঘটনাস্থল মধুখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কর, বোয়ালমারী থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল আলম পরিদর্শন করেছেন।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহসভাপতি মাসুদ শেখের সমর্থক মনিরুল ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পাদক বিষয়ক সম্পাদক আ. মান্নান মাতুব্বরের সমর্থক নজরুল মোল্যা স্থানীয় কুমার নদে পাশাপাশি পাট পঁচানোর জন্য জাগ দেয়। কয়েকদিন পরে মনিরুলের পাটের জাগ হারিয়ে গেলে সে নজরুল মোল্যার বাড়ি গিয়ে পাটের জাগের ব্যাপারে জানতে চায়। এ সময় নজরুল মনিরুলকে বলে আমার পাট উঠিয়ে নিয়ে এসেছে; তোমারটা কোথায় গেছে তা জানিনা।

ওই সময় উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনা ও কোরবানীর মাংস কিভাবে ভাগাভাগি হবে এ নিয়ে ময়েনদিয়া ও পরশ্বেরদী গ্রামে ঈদের আগেরদিন দুই গ্রুপের বিভিন্ন সময় গোপনে মিটিং চলছিলো। এ ঘটনার জের ধরে গতকাল শুক্রবার সাড়ে ৯ টার দিকে দুই গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ঢাল, সড়কি, রামদা ও লাঠিসোঠা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় পাশের সালথা উপজেলার খারদিয়া গ্রামের কিছু লোকজন মাসুদের লোকজনের সাথে পক্ষ দেয়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের লোকজনের বাড়িঘর, দোকান ভাংচুর ও লুটপাট হয় বলে জানা যায়। এতে উভয় পক্ষের ২৫-৩০টি বাড়িঘর ও দোকান ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে ৬ পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের ৪০-৫০জন আহত হয়েছে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে সর্টগানের গুলি নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে।

এসময় ঘটনাস্থল থেকে আটজনকে আটক করে থানা পুলিশ। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আহতদের মধ্যে আছাদ শেখ (৪০) একজন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। উভয় পক্ষের বাকি আহতরা বিভিন্ন মামলার আসামি থাকায় স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা নিয়ে পলাতক রয়েছে।

এ ব্যাপারে পরমেশ্বরদী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহসভাপতি মো. মাসুদ শেখ বলেন, আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। ঈদেও বাড়ি যায়নি। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুল আলম মিনা মুকুল আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তাই তাঁর সাথে রাজনীতি করি। তবে মান্নান মাতুব্বর বিভিন্ন সময় আমাকে ও লোকজনকে হুমকি দিয়ে বলেন, ময়েনদিয়া বাজারে ব্যবসা করতে হলে আমার সাথে রাজনীতি করতে হবে। শুনেছি ময়েনদিয়া বাজারে আমার দোকান ও আমার পক্ষের লোকজনের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে মান্নান মাতুব্বর গং।

আরেক পক্ষের নেতৃত্বকারী পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আ. মান্নান মাতুব্বর বলেন, আমি স্থানীয় রাজনীতি করি। আমার লোকজনকে দলে নিতে মাসুদ বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখায়। আজকে তার লোকজন আমার পক্ষের লোকজনের উপর হামলা চালালে আমার লোকজনও তাদের উপর পাল্টা হামলা চালিয়েছে। আমার দুইজন মারাত্বক আহত হয়ে ফরিদপুর মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে।

এ ব্যাপারে পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম মিনা মুকুল মুঠোফোনে বলেন, আমি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান; আমার কোন গ্রুপ নাই। সবাই এ ইউনিয়নের বাসিন্দা। মান্নান মাতুব্বর গ্রুপ ও মাসুদ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আগের একটি সংঘর্ষের ঘটনায় প্রধান আসামি আমাকে করা হয়। সংঘর্ষের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নুরুল আলম শুক্রবার বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

সংঘর্ষে লিপ্তকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য সর্টগানের গুলি নিক্ষেপ ও লাঠি চার্জ করা হয়। সংঘর্ষের এলাকা বর্তমানে শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্তু কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *