সব নির্দেশনা সাতই মার্চের ভাষণেই ছিল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাসস :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।

‘ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ২০২১’ উদযাপন উপলক্ষে রোববার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

জনগণের ভোটে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা দিতে পশ্চিম পাকিস্তানিরা যখন ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল, তখন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ আসে বঙ্গবন্ধুর বজ্রঘোষণা – ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সমাবেশে সেই ভাষণের পর থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কার্যত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই পরিচালিত হতে থাকে।

বঙ্গবন্ধকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “এই ভাষণের ভেতরে আপনি তিনটা স্তর পাবেন। একটা ঐতিহাসিক পটভূমি আছে যে বাঙালির বঞ্চনার ইতিহাস, অত্যাচার-নির্যাতনের ইতিহাস। তখনকার বর্তমান অবস্থাটা … কীভাবে সেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা গুলি করে মানুষকে হত্যা করেছে, কীভাবে মানুষ ভোট দিয়েছে। তাদের সেই অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করছে সেই বঞ্চনার ইতিহাস। সেই তখনকার নির্যাতনের ইতিহাস তিনি বলছেন।

“আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবার সকল নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কারণ একটা গেরিলা যুদ্ধ হবে, সেই গেরিলা যুদ্ধ হতে হলে কী কী করতে হবে,সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা থেকে শুরু করে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে বলেছেন।”

শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গবন্ধু এটাও জানতেন যে মুহূর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা বাস্তবে অফিশিয়ালভাবে দেবেন, সেই মুহূর্তে হয়ত তিনি বেঁচে নাও থাকতে পারেন। সেইজন্য তার এই ঐতিহাসিক ভাষণের ভেতরেই কিন্তু তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিয়ে গেলেন।”

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- ভাষণে বঙ্গবন্ধু এই কথাটি দুবার উচ্চারণের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অর্থাৎ এটা যে স্বাধীনতার সংগ্রাম আর এই যুদ্ধটা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হবে, সেই কথাটাই কিন্তু তিনি স্পষ্ট বলে গেছেন। কাজেই এটা একদিক দিয়ে বলতে গেলে সাতই মার্চই তো প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা।”

এই ঘোষণার পর থেকে পূর্ববঙ্গ কীভাবে চলবে, জাতির পিতা সেই নির্দেশনা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ কোনো লিখিত ভাষণ দেননি।

“তার জীবনের সমস্ত সংগ্রামের যেই অভিজ্ঞতা এবং তার বাঙালি জাতিকে নিয়ে যেই লক্ষ্য সেই লক্ষ্য স্থির করেই কিন্তু তিনি এই ভাষণটা দিয়েছিলেন, আর এই পরামর্শটা আমার মা-ই দিয়েছিলেন,” বলেন শেখ হাসিনা।

ঐতিহাসিক সেই ভাষণ দেওয়ার আগে অনেকের অনেক ধরনের পরামর্শ ছিল, যা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

“তখন আমাদের ছাত্রনেতাদের অনেকে .. নাম বলতে আপত্তি নেই। যেমন সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাকসহ, তোফায়েল আহমেদসহ অনেক ছাত্রনেতারা ৩২ নম্বরে এসেছেন। সিরাজুল আলম খান খুব বারবার জানাতে চাইছিল যে আজকেই স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিতেই হবে। সেই সময় অনেক অনেক বুদ্ধিজীবীরা লিখতেন,পয়েন্ট দিয়ে দিয়ে যেতেন আবার কেউ পরামর্শ দিয়ে যেতেন যে কী করে বলতে হবে,কী বলতে হবে।

“সিরাজুল আলম খানকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, একটা কথা বারবার আমার কানে এখনও বাজে। বলেছিলেন, ‘সিরাজ, লিডার শুড লিড দ্য ল্যাড। ল্যাড শুড নট লিড দ্য লিডার। কী করতে হবে আমি জানি। তোমরা তোমাদের কাজ কর। যাও”।”

শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতিটি ক্ষেত্রে সংগ্রামের ক্ষেত্রে আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটা পরিমিতিবোধ কিন্তু থাকতে হয়। সাতই মার্চের ভাষণ যখন দিতে যাবেন, তখন আমার মায়ের একটাই পরামর্শ ছিল- সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছ তুমি। তোমার মনে যেই কথা আছে, তুমি ঠিক সেই কথাটাই বলবে। কারও কথা শুনবার তোমার প্রয়োজন নাই।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর সাতই মার্চের ঐতিহসিক ভাষণ প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ইতিহাসকে এত সহজে মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে কখনও দাবিয়ে রাখা যায় না। আর বাঙালিকে দাবায়ে রাখা যায় না এটা তো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই বলে গেছেন তার ৭ই মার্চের ভাষণে।

“তাই দাবায়ে রাখতে পারে নাই। আজকে সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। আজকে এই ভাষণ বিশ্বস্বীকৃতি যেমন পেয়েছে, তেমনি জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় এই ভাষণটা অনুবাদ করা হয়েছে। প্রতিটি ভাষায় এটা অনুবাদ করে প্রচার করা হচ্ছে।”

বিশ্বজুড়ে এখন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে এবং তার অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে বের করার চেষ্টাও চলছে, যা বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। সেই মুক্তির পথে অনেক দূর আমরা এগিয়ে গেছি। ইনশাল্লাহ আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব।”

গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে অনুষ্ঠানে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী,সংস্কতি সচিব বদরুল আরেফীনসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *