৯১’র উপদেষ্টার সাথে যা করেছিলেন প্রকৃতিই আপনাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে

‘আমাকে দোষাতে হলে
আপনাদের জানতে হবে’
বখতেয়ার ইসলাম মুন্না>>>>
আজ আমার কাছে একটা বিশেষ দিন। এটা না হয় গল্পের শেষে বলি। আজ গডফাদার, ডন, সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান নাইবা বলি। বলতে চাই, ফেনীর সম্রাজ্ঞী বিহীন রাজ্য রাজত্ব হারা সম্রাট ভিটে বাড়ির এক মুঠো স্বাদ নিতে আজ আপনি কত মরিয়া। বিষয়টি সত্যি কত বেদনা বিধুর। নির্মম। মর্মান্তিক। সেই পতিত সম্রাটের কাছে আমার খুব জানতে মন চায়, ২০ বছর পরও এখনও কেন আপনার সাথে এমন আচরণ হচ্ছে। আপনার অপরাধ কোথায় ছিল। কখনও খুঁজে দেখেছেন যেসব অপরাধে আপনি রাজ্য রাজত্ব হারা হলেন। বিরোধী দলের সময় বাদই দিলাম। মনে পড়ে ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত সরকারী দলের সংসদ সদস্য হিসেবে আপনি ফেনীর মানুষকে কেমন রেখেছিলেন। সে সময় কালে নির্যাতন হামলা মামলার কথা সময় গড়নোর সাথে সাথে অনেকে হয়তো ভুলতে বসেছে। তবে সেসময়কার নিহত ১৫৪ জনের পরিবার আজও কাঁদে। এখনও যন্ত্রণা দেয় আপনার নেতৃত্বে ও নির্দেশে ঐতিহাসিক ফেনী প্রেস ক্লাবে একটি পত্রিকার উদ্বোবধন অনুষ্ঠানে বোমা হামলা ভাংচুর , জাতীয় পত্রিকার ঢাকা থেকে আসা সাংবাদিক জুলফিকার আলী মানিক, আহসান কবির, ফেনীর সাংবাদিক টিপু সুলতান, মীর হোসেন মিরু, ওসমান হারুন মাহমুদ দুলাল, আবু তাহের, নূরুল করিম মজুমদার, আবুল কাশেম, মাহফুজুল হক, মাহবুব উল হক পেয়ারা, জামাল উদ্দিনসহ অনেক সাংবাদিককেই আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সীমাহীন নির্যাতন করেছেন। আমার মায়ের নামের স্কুল ভবন গুড়িয়ে দেয়া, আমার মা বাবার কবরে বোমা হামলা, আমাদের মাস্টার পাড়ায় বড় বোনের বাসায় হামলা ভাংচুর, পশ্চিম ডাক্তার পাড়ায় আমাদের বাসায় বোমা হামলা, আমার ভাই ও স্ত্রীর গাড়ীতে বোমা হামলা, সোনাগাজীর এক ছাত্রনেতাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আমাকে দফায় দফায় হত্যার চেষ্টা আজও আমার মনকে দগ্ধ করে। তবে এখন আর প্রতিশোধের আগুন আমাকে উত্তপ্ত করে না। আপনি উত্যাক্ত না করলে আমিও আর উত্তপ্ত হতে চাইও না। কারণ প্রকৃতিই আপনার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। এখন সেটাও আমি আর দেখতে চাই না।

হে পতিত সম্রাট
আপনার কি মনে পড়ে ১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে ভোটের কদিন আগে ফেনী-৩ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালেব আলী চাচার বড় মসজিদস্থ নির্বাচনী অফিস থেকে আপনি নিজে উপস্থিত থেকে ১৫ হাজার পোস্টার নিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। অফিসের সব কিছু তছনছ করে দিয়ে যান। আসবাবপত্র ভাংচুর করেন। সেসময় আমি সেন্টু, মিলকী ভাই শাকিল, সেলিমসহ অনেকেই তালেব আলী চাচার নির্বাচন করেছিলাম।পুরো নির্বাচনী এলাকায় পদে পদে বাঁধা দিয়ে তালেব আলী চাচাকে হারানোর সকল ব্যবস্থা করেছিলেন। মনে পড়ে ১৯৯১ সালে কিন্তু এই তালেব আলী চাচা জননেত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টাই ছিলেন।তিনি ফেনী-৩ আসনের তিনবারের এমপি ছিলেন। ৮৫তে কানন সিনেমা হলে আওয়ামী লীগের জেলা সম্মেলনে তালেব আলী চাচাকে লাঞ্চিত করে কমিটি দখলে নিয়েছিলেন।

সেদিন আমার ঘাড়ে চেয়ারের আঘাত আজও আমার অনুভূত হয়।সেই থেকে আপনি তালেব আলী চাচাকে ফেনীর কোথাও বক্তৃতা দিতে দেয়া দুরে থাক মঞ্চেও তোলেননি। তখনও জননেত্রীর কাছে বঙ্গবন্ধুর সাথের তালেব আলী চাচাও কোন ফরিয়াদ করে সুফল পাননি। তিনি অনেক অপমান অপদস্থের বেদনা নিয়ে পৃথিবী ছেড়েছেন। ব্যাপারটা আপনাকে বুঝতে হবে। ভাবতে হবে।

এখন ২০২০ সাল। আপনিও জননেত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা। অথচ ৯১ এর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। কি অবাক কান্ড তাই না ! আসলে এখন আপনার সাথে যা হচ্ছে প্রকৃতিই আপনাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে।

২০০১ সালের ১৭ আগস্ট আজকের এই দিনে সেনা বিডিআর পুলিশের যৌথ অভিযানে আত্ম সমর্থন করলে বা নিহত হলে হয়তো বীর অথবা শহীদের মর্যদা পেতেন। কিন্তু আপনি তা করেননি। আপনি আপনার সকল অপকর্মের বোঝা কর্মীদের মাথায় তুলে দিয়ে টাকার পাহাড় নিয়ে ভারত পালিয়ে গেলেন। আর এদিকে নির্যাতিত বিরোধী পক্ষ ক্ষমতায় এসে আপনার কর্মীদের খুঁজে খুঁজে হত্যার মহোৎসব চালিয়েছে। বাড়ি ঘর ছাড়া এসব কর্মীরা শিয়াল কুকুরের মত জীবন পালন করেছে। তখন কর্মীদের মাথা বেচা এক কানা কড়িও আপনি কাউকে দেননি।সাহায্য করেননি।

আপনার জীবনের ডুবন্ত বেলায় আপনি গত ২০ বছরেও অতীত অপরাধের জন্য একটি বারও কি ফেনীবাসির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ? না।তা করেননি। ক্ষমা চাইলে ফেনীর মানুষ নিশ্চয় ক্ষমা করেও দিতো। সব অতীত ভুলে আপনার ভালো কাজগুলো মনে রাখতো। কিন্তু উল্টো এখনও আপনি একযুগ পর নিজ ভিটায় এসে পবিত্র ঈদের দিন টুকরো টুকরো করে মানুষ মারার হুমকি ধমকি দেয়াকে মানুষ গ্রহণ করেনি। বার্ধ্যকে আপনি নুয়ে পড়েছেন। ভর দিয়ে চলতে হয়। আপনার শরীরে বসা একটা মশা মারার ক্ষমতাও নেই। এ অবস্থায় এখন কি আর এসব আপনার সাথে যায় ?

আমি দৃঢ়ভাবে সবসময় সবাইকে বলি জয়নাল হাজারীর পতন বাংলাদেশ রাজনীতির একটি পাঠচক্র। এ পাঠ থেকে যিনি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি তিনি হতভাগা। না হয় দুর্ভাগা। কারণ যিনি শিখলেন না তার জন্যও একই পরিনতি অপেক্ষা করছে। তাকেও আপনার মত একদিন দাওয়াত ভিক্ষা চাইতে হবে।অথবা তার চাইতেও করুণ হতে পারে।

হলফ করে বলতে পারি, গত তিন দশকে রাজনৈতিক অবৈধ উপার্জনের খাতগুলো পালা বদলের সাথে সাথে হাত বদল হয়েছে মাত্র। গুনগত একটুও পরিবর্তন হয়নি। হয়েছে শুধু পরিমান গত পরিবর্তন।তবে আমাদের আশির দশকের রাজনৈতিক মিছিল শেষে কলেজ ক্যান্টিনের পঞ্চাশ পয়সার সিঙ্গারা ও সমাবেশ শেষে বারিক হোটেল এবং ফাইভ স্টার হোটেলের পাঁচ টাকার ভাত, আলু ভর্তা, ডাল ছাড়া কিছুই জোটেনি। রাজনীতি যে আয়ের প্রকল্প হতে পারে সেটাও শিখতে পারিনি।কারণ তখন ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত ছিলো না। নিয়ন্ত্রক ছিল। এখন রাজনীতিতে এসব গল্পগুলো হারিয়ে যাওয়ায় দুঃখ হয়।

আজকের সত্য হলো, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনই স্থায়ী রাজনৈতিক অবকাঠামো তৈরী করে না। করে শুধু তাসের ঘর। একমাত্র জননেত্রীর এক টোকাতেই সে ঘর মুহুর্তেই ভেঙ্গে চুড় হয়।জননেত্রীর টোকা কখন কোন ঘরে পড়ে বা পড়বে সেটা একমাত্র তিনি ও আল্লাহ্ই ভালো জানেন।

সবশেষ আল্লাহ্ পাক সবাইকে বুঝবার ও সুস্থতার সাথে নেক হায়াৎ দান করুক। সবাই সবাইকে ক্ষমা করে দেই।

বাংলারদর্পন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *