প্রতিবেদক :
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে মঙ্গলবারের (৪ আগস্ট) বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি মেহেদী হাসান রনির (২৪) বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের ভাদেশ্বরা গ্রামে।
বুধবার (৫ আগস্ট) রনির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলেকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা ইনারা বেগম। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না, তার ছেলে আর বেঁচে নেই। জ্ঞান ফিরলেই তিনি জিজ্ঞাসা করছেন, আমার জাদু কই।
আমার জাদুকে আমার কোলে ফিরিয়ে দাও। কখনও বা বলছেন, আমার ছেলের কিছু হয় নাই। আবার ফিরে আসবে। আমার বাবারে আবার দেখতে চাই।
ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে প্রায় ছয় ঘণ্টা অচেতন ছিলেন তিনি। পরে জ্ঞান ফিরে এলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। ছেলের অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তার মা বলেন, ছেলেকে তো আর জীবিত ফেরত পাব না, শেষ বারের মত তার মুখটা আমি একবার দেখতে চাই। পরিবারের লোকজন জানান, ঈদের রাতেও ফোন করে সবার খোঁজ খবর নিয়েছিলেন রনি।
এটাই যে তার শেষ ফোন হবে, তা কে জানত? তার বাবা কয়েক বছর ধরে অসুস্থ। ঠিকমতো কাজকর্ম করতে পারেন না। এ ছাড়া তাদের জমানো টাকা কিছুই নেই। ধার-দেনায় জর্জরিত। একদিকে সন্তান হারানোর বেদনা, অন্যদিকে ভবিষ্যতের চিন্তায় হতাশা ভুগছে পরিবারের লোকজন।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ তার বাবা তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে রনির রুমমেট ফোন করে বিস্ফোরণে তার ছেলের মৃত্যুর খবর জানান। তার ছেলের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে তিনি সরকারের সহযোগিতা চান।
নিহতের চাচা সুমন ভূইয়া বলেন, তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রনি সবার বড়। বাকি দুই ভাই এখনও লেখাপড়া করছে। পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে প্রায় ছয় বছর আগে একটি সুপার শপের কাজ নিয়ে লেবাননে গেলেও সেখানে সে অর্থনৈতিকভাবে সুবিধা করতে পারেননি। আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে বিদেশ যান। এখনও সে ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। বাড়ির চার শতাংশ জায়গায় একটি টিনের ঘর ছাড়া পরিবারটির আর কিছুই নেই।