ঘুর্নিঝড় আম্পানের নোনা পানিতে হাজারো চাষির স্বপ্ন ভঙ্গ (ভিডিওসহ)

শেখ সিরাজুদ্দৌলা লিংকন, কয়রা (খুলনা) :
করোনা মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককুল যখন, আউশ ধানের বীজতলা,ওলকচু,শাকসবজি, আম,পেঁপে কলাসহ বিভিন্ন ফসলে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছিল, ঠিক তখনই উপকূলীয় খুলনার কয়রায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে বেড়িবাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষের নোনা পানিতে তলিয়ে দিল কৃষকের ক্ষেত ।

প্রান্তিক কৃষক বিধান মণ্ডল ধারদেনা করে ১বিঘা জমিতে ওল কচু হলুদসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছিলেন আগাম জাতের এসকল সবজি উঠানোর কথা ছিল কয়েকদিন পর দাম ভালো থাকায় তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন সবজি বিক্রির টাকায় দেনা শোধের পর কিছু ধান কিনবেন, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ যোগাবেন। কিন্তু ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষের নোনা পানিতে সম্পূর্ণভাবে ভেসে গেছে তার সবজি ক্ষেত তার স্বপ্ন এখন আর পূরণ হবে না।

এভাবে স্বপ্নের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খুলনার কয়রা উপজেলার চার ইউনিয়নের বিধান মণ্ডল এর মত হাজারো কৃষক। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে দুই নম্বর কয়রা গ্রামের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধে দাঁড়িয়ে নোনা পানিতে তলিয়ে থাকা সবজি ক্ষেত দেখাচ্ছিলেন বিধান।

তিনি বলেন ১ বিঘা ক্ষেতের মধ্যে প্রায় দশ কাঠা জায়গায় দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ৫শ পিস ওল,৫০কেজি কচু ও হলুদ,বাকি ১০কাঠা জমিতে পেঁপে কলা ঝিঙে চিচিঙ্গা পুইশাকসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলাম বীজ ও পত্তনি খরচসহ খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা আগাম উঠাতে পারলে লাখ টাকা বিক্রি হত এখন সব শেষ।

পাশের এক নং কয়রা গ্রামের হরিদাস বিশ্বাস দেখাচ্ছিলেন তার বসতবাড়ির সাথে প্রায় ১২কাঠা জমিতে লাগানো ওল,কচু,হলুদ,চাষী আলু সহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত দীর্ঘ ২০দিন যাবত কোমর পানিতে ডুবে আছে। তিনি বলেন সারা বছর সবজি বেচে সংসার চলে তার। তার প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে এখন সে নিঃস্ব।

দুই নম্বর কয়রা গ্রামের অনিল ঘরামী বলেন, নোনা পানিতে সব শেষ। সংসারের দুই ছেলে স্বামী-স্ত্রীসহ ৪জন বড় ছেলে সুজিত এবার এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে, সামনে তাকে ভালো কলেজে ভর্তি করাতে হবে, প্রায় ১৫কাঠা জমিতে লাগানো সবজিই ছিল একমাত্র ভরসা। গাঙের নোনা পানিতে সব শেষ করে দিছে, সম্বল বলতে ওই জমির ক্ষেত, ওতেই সংসার খরচ ও দুই ছেলের পড়ালেখা। ছেলেটিকে মনে হয় আর পড়ানো সম্ভব হবে না বলে তিনি কেঁদে ফেলেন।

৩নং কয়রা গ্রামের নিমাই মন্ডল ১০ কাঠা জমিতে লাগানো সবজি ক্ষেত শেষ । সারা বছর নিজের সংসারে খেয়ে বাড়তি ২০-২৫ হাজার টাকা বিক্রি হতো তার, নোনা পানিতে সব শেষ।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ৬৩৩ হেক্টর জমিতে আউশ বীজতলা,শাকসবজী পেঁপে কলা সূর্যমুখী মুগ তিল আম ইত্যাদি ফসল আবাদ হয়েছিল এরমধ্যে আম্পানের আঘাতে ৫৫২হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। আর বাঁধ ভেঙে উপজেলার উত্তর রেদকাশী, দক্ষিন বেদকাশী,মহারাজপুর,কয়রা সদরসহ ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৩৩শ হেক্টর আবাদি জমি নোনা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে প্রায় কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া চলতি আমন মৌসুমে এই ৩৩শ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদনে ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মিজান মাহমুদ বলেন এ মুহূর্তে লবণ পানি দ্রুত নিষ্কাশন ও প্রচুর বৃষ্টি হলে লবণের মাত্রা কমে গেলে পুনরায় ফসল আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমনের বীজতলা তৈরির কথা, লবণ পানি নিষ্কাশন দেরিতে হলে বিকল্প হিসেবে কৃষকদের লবণ সহিষ্ণু জাতের বীজতলা তৈরির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক পংকজ কান্তি মজুমদার বাংলারদর্পনকে বলেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি, তবে আসবে বলে আশা করা যায়। আর এলে কয়রা কে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাখা হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে করোনার জন্য কৃষি প্রণোদনায় পারিবারিক কৃষির আওতায় সবজি পুষ্টি বাগান স্থাপনে খরচ বাবদ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।

তবে অভিজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, এদেশ থেকে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়,উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে সরকারি সহযোগিতা দেখা দিয়েছে, অন্তত ছয় মাসের জন্য কৃষির সব খাতে ঋণের সুদ মওকুফ করতে হবে, করতে হবে বিভিন্ন কৃষিবান্ধব প্যাকেজ, কৃষি উৎপাদন সামগ্রী নির্বিঘ্ন করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঠিক তালিকা করে তাদের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এটা এক ধরনের বিনিয়োগ যা দেশের কর্মসংস্থান দারিদ্র্য বিমোচন ও রপ্তানি বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করে। বাংলারদর্পন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *