বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পে হরিলুট

বাংলারদর্পন :

দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প জোন গড়ে উঠছে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে। যেখানে দিন রাত চলছে কর্মযজ্ঞ। এ জোনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অধিকাংশ ঠিকাদারই চীনা কোম্পানী। এরমধ্যে পাঁচটি কৃত্রিম লেকের সমন্বয়ে শেখ হাসিনা সরোবর তৈরি ও সমুদ্র প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী। প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পে এখন চলছে ব্লক বসানোর কাজ। প্রকল্পটি তদারক করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

 

আর এ প্রকল্প থেকে নানা অনিয়ম ও কারচুপির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে চীনা হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী ও পাউবোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তথ্যমতে, প্রকল্পের সাড়ে ২২ কিলোমিটার সমুদ্র প্রতিরক্ষা বাঁধের মোট পাঁচটি ইয়ার্ডে সাড়ে ১৮ লাখ ব্লক স্থাপনের কাজ চলছে। এরমধ্যে ৩/৪ সাইজের সাড়ে ৭ লাখ এবং ৫০০/৫০০ সাইজের প্রায় ১১ লাখ ব্লক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের ১, ২, ৩ ও ৫ নং ইয়ার্ডে এসব ব্লক নির্মাণ ও স্থাপনের কাজ চলছে। কিন্তু ব্লক নির্মাণে করা হচ্ছে নানা কারচুপি ও অনিয়ম। যার মাধ্যমে পুকুর চুরি করছে চীনা কোম্পানী। আর এসব কাজে সহযোগীতা করছেন পাউবোর কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, ব্লক নির্মাণে নির্ধারিত (সিলেকশন গ্রেড) বালু ও পাথর ব্যবহার করার শর্ত থাকলেও স্থানীয়ভাবে নদী ও খাল থেকে তোলা বালু ও ইটভাটা থেকে সংগৃহীত ইটের কংক্রিট ব্যবহার করা হচ্ছে। যা অত্যন্ত নিন্মমানের। ফলে নির্মিত ব্লক হাতের আঙুল দিয়ে ঘষা দিলেই গুড়া হয়ে যাচ্ছে।

 

সরজমিনে পরিদর্শনের পর আমাদের মীরসরাই সংবাদদাতা জানান, ব্লক নির্মাণে ব্যবহৃত ইটের কংক্রিটগুলো স্থানীয় ইটভাটা থেকে সংগ্রহ করে আনা হচ্ছে। যেখানে দুই ও তিন নম্বরসহ বাতিলকৃত (রিজেক্টেড) ইটও রয়েছে। যা ভেঙে কংক্রিট বানিয়ে ব্লক তৈরী করা হচ্ছে। এই ইট ও বালুর ছবিসহ ব্লক নির্মাণের ছবি তোলার সময় বাঁধার সম্মুখীন হন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রকল্পে প্রবেশের সময় মূল ফটকেও বাঁধা দেওয়া হয় তাকে। পরে তিনি স্থানীয় নদী ও খাল থেকে তোলা বালুবাহী ট্রাকে করে শ্রমিক সেজে প্রকল্পে প্রবেশ করে কাজ প্রত্যক্ষ করেন।

 

মীরসরাইয়ের এক গণমাধ্যমকর্মী জানান, শুধু বালু ও পাথরে কারসাজি নয়, ব্লকের সাইজেও কারচুপি করা হচ্ছে। ৫০০/৫০০ সাইজের নির্মিত ব্লকের অনেকগুলো ব্লক আকারে ছোট পাওয়া গেছে। ব্লক স্থাপনেও চলছে নানা কারচুপি। বাঁধের শেডেও বিছানো হচ্ছে নিন্মমানের প্লাস্টিক ও চট। যেখান থেকে কোটি কোটি টাকা হরিলুট করছে চীনা কোম্পানী ও পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে চীনা কোম্পানী হারবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপক হেলেনের সাথে কথা বলতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকল্পের তত্ত্ববধায়ক মোহাম্মদ আনিছ হায়দার খান বলেন, তিনি বাংলা ভাষা তো জানেনই না, ইংরেজিও তেমন একটা জানেন না বলে এড়িয়ে যান। জানতে চাইলে আনিছ হায়দার খান বলেন, আমি এসেছি নতুন।

তারপরও যেটা বলব সেটা হচ্ছে-প্রকল্পে তেমন কোন অনিয়ম হচ্ছে না। নির্মিত ব্লক হাতের ঘষায় ভেঙে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্লক ভাঙছে না, তবে কিনারা তো ভাঙবেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া বলেন, আমিও নুতন যোগদান করেছি। তারপরও আমি বলতে পারি এ প্রকল্পে কোন অনিয়ম ও কারচুপি হচ্ছে না। ইটের কংক্রিটগুলো ব্লক নির্মাণে নয়, অন্য কাজে ব্যবহার হচ্ছে। নদী থেকে তোলা বালু ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি বেপজা ও বেজা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা বিষয়টি বুঝবেন।

 

প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোল ঘেষে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প জোন। জোন সুরক্ষায় নির্মিত হচ্ছে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুপার ডাইক কাম সড়ক। যা জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাস থেকে শিল্প জোনকে সুরক্ষা দেবে। কিন্তু অনিয়ম ও কারচুপির মাধ্যমে নিন্মমানের উপকরণ দিয়ে ব্লক নির্মাণ করায় সুরক্ষার বদলে এই জোন হুমকির মুখে পড়বে বলে সচেতন মহলের ধারণা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *