দিল্লি রাজ্যসভা নির্বাচনে কেজরিওয়ালের কাছে মোদির ভরাডুবি | বাংলারদর্পন

নিউজ ডেস্ক :
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে আম আদমি পার্টি বা ‘আপ’ বিপুল ব্যবধানে বিজেপিকে হারিয়ে আবার ক্ষমতায় ফিরেছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে আপ দিল্লি বিধানসভার ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৩টিতে জিতেছে।
অন্যদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৭টি আসন। যদিও ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পেয়েছিল ৩টি আসল। তাই এবারের ভোটে বিজেপির সেই অবস্থার কিঞ্চিৎ উন্নতি হয়েছে বলা গেলেও হাই প্রোফাইল কেন্দ্রগুলিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দিল্লিতে এবারের নির্বাচনকে বিজেপি সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। তবে তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। শহুরে ভোটাররা শেষ পর্যন্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ বা উন্নয়নকেই বেছে নিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে আপের এই বিপুল সাফল্য ভারতের রাজনীতিতে কী তাৎপর্য বহন করছে? বস্তুত মাত্র আট-নয় মাস আগের লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির সাতটি আসনের মধ্যে সাতটিই গিয়েছিল বিজেপির দখলে। ফলে এই বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টি যে প্রায় ৯০ শতাংশ জিতে নেবে তা হয়তো দলীয় সমর্থকরাও অনেকে আশা করতে পারেনি।

দলের সদর দফতরে বিজয়োৎসবে শামিল হওয়া ব্যক্তিদের একজন নাজিয়া চৌধুরী। বিবিসিকে তিনি বলেন, “কেজরিওয়াল জিতবেন এটা জানাই ছিল। কারণ মনেপ্রাণে তার জয় চেয়েই খুব জোরে বোতাম টিপেছিলাম। আর বাস্তবতাও হলো, উনি সত্যিই কাজ করেছেন।”
পাড়ায় পাড়ায় সরকারি ‘মহল্লা ক্লিনিক’ চালু করেছেন কেজরিওয়াল। সরকারি স্কুলগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন। মেয়েদের বিনা ভাড়ায় বাসে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তার সরকারের এসব কর্মকাণ্ড যে দিল্লির মানুষের মনে ছাপ ফেলতে পেরেছে, সেটা নির্বাচনি ফলাফলে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
কালকাজি আসন থেকে জেতা আপের তারকা ক্যাম্পেনার আতিশি মারলেনা বলেন, “আগামী টার্মেও পরিবহন, ২৪ ঘণ্টা পানি, বায়ু দূষণ কমানো এবং এবার উচ্চশিক্ষায় জোর দেওয়াটাই হবে দলের অগ্রাধিকার।” তার ভাষায়, “আসলে কাজ করলে তবেই যে ভোট মেলে, দিল্লি সেটা আবার প্রমাণ করে দিলো।”

দিল্লির শাহিনবাগে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে মুসলিম নারীদের প্রতিবাদ এবারের নির্বাচনে একটা বড় ইস্যু হয়ে উঠেছিল। রাস্তা আটকে শাহীনবাগ দিল্লিবাসীকে যে অসুবিধায় ফেলছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের প্রাণান্ত চেষ্টা করেছে যোগী আদিত্যনাথসহ বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। শাহীনবাগ যে ওখলা কেন্দ্রে অবস্থিত, সেখানে থেকে রেকর্ড ব্যবধানে জেতা আপের আমানাতুল্লা খান বলছেন, ‘‘এই ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা আজ হেরে গেছে, জিতেছে উন্নয়ন। এটা তো বুঝতেই পারছেন, ওখলার হিন্দু ভাইরাও আমাকে ভোট না-দিলে আমি এত বড় মার্জিনে জিততেই পারতাম না।”

বিজেপি মুখপাত্র বিবেক রেড্ডি অবশ্য মনে করছেন, স্থানীয় পর্যায়ে কেজরিওয়ালের জুৎসই কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী তুলে ধরতে পারেনি তার দল। এছাড়া আপ সরকার বিনামূল্যে পানি-বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়ায় লোকজন তাদের দিকেই ঝুঁকেছে। ফলে সেখানকার নির্বাচনে বিজেপির পরাজয় ঘটেছে।

সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অভিযোগ খণ্ডন করে বিজেপি মুখপাত্রের যুক্তি, ‘‘শাহিনবাগে যেভাবে ভারত ভাঙার কথা বলা হচ্ছিল তার প্রতিবাদ আমাদের করতেই হতো।”
শিবসেনা নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীর ভাষায়, “দিল্লির নির্বাচন এটাই প্রমাণ করে দিলো যে, বিজেপির চেয়ে ভালো বিকল্প থাকলে মানুষ তা বেছে নিতে দ্বিধা করবে না। লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির কোনও চ্যালেঞ্জার ছিল না। কিন্তু এখানে বিজেপির সামনে কেজরিওয়াল ছিলেন। শুধু শাহীনবাগে নজর দিয়ে তারা যে বিভাজনের রাজনীতি করতে চেয়েছিল মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করেছে।”

দিল্লিতে হ্যাটট্রিক করে ক্ষমতায় আসা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে এর মধ্যেই অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরোধী নেতারাও। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গে এক সভায় মমতা বলেন, “এই তো আসার আগে দিল্লিতে আমাদের বন্ধু অরবিন্দকে ফোন করে বাংলার মানুষের পক্ষ থেকে অজস্র অভিনন্দন জানিয়ে এলাম। আমরা কিন্তু সব সময় একসঙ্গেই কাজ করি। ওদিকে বিজেপিকে দেখুন! পুরো সরকার নিয়ে, সব মেশিনারি নিয়ে, টাকার জোর নিয়ে, সব এজেন্সিকে সঙ্গে নিয়েও একেবারে ভোঁকাট্টা হয়ে গেছে। পুরো ভরাডুবি হয়েছে ওদের!”

অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তার দলের এদিনের বিপুল বিজয় ভারতে বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে নিঃসন্দেহে বাড়তি মনোবল জোগাবে। তবে নরেন্দ্র মোদির মোকাবিলায় বিরোধী দলগুলোর ঐক্যকে তা কতটা মজবুত করতে পারবে তা বলার সময় এখনও আসেনি।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি তৃতীয়বারের জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ভালবাসার দিনেই ফের সফর শুরু করতে চলেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *