ফেনী সংবাদদাতা :
ফেনী বাজারের ব্যাবসায়ী মোঃ আবুল বশর আজ বিকেলে ফেনীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার ক্রয়কৃত জমি ভুমিদস্যুকে রেজিষ্ট্রি করে দিতে বলেছিলেন ফেনী সদর থানার সেই বিতর্কিত ওসি আবুল কালাম আজাদ। তিনি আরও বলেন, আমি নিন্ম তফসিল বর্ণিত ‘ক’ প্লটের ০৪ শতাংশ ভুমি বিগত ২৯/০৭/২০০১ইং তারিখে ফেনীর এস.এস.কে রোডের খন্দকার গলির (ইসলামপুর রোডের মাথা সংলগ্ন) বাসিন্দা মৃত সফিকুল হক খোন্দকার, পিতা- মৃত মাওলানা মাহবুবুল হক খোন্দকার গংদের নিকট হইতে এওজ কবলা মূলে ক্রয় করি। আমার এই সম্পত্তিটি ক্রয় পরবর্তী সময়ে ছিল আয়তাকার ক্ষেত্র বিশিষ্ট। অপর দিকে আমার প্রতিবেশী নুরুল আলম ভুঞা, পিতা- আলা উদ্দিন, সাং- ফুয়াদ ভিলা, খন্দকার গলি, ইসলামপুর রোড, ফেনী জনৈকা নুর নাহার খোন্দকার, স্বামী- ডাঃ সামছুদ্দিন ইলিয়াছ থেকে যে ৪.৬০ শতাংশ ভুমি ক্রয় করে তাহা ছিল আমার নালিশী এই ভুমির পূর্ব দক্ষিণ পার্শ্ব ঘিরিয়া “এল.সাইজ” বিশিষ্ট। যাহা কোন উন্নয়ন কর্মকান্ডের উপযোগী ছিল না এবং কোন রাস্তা ছিল না।
এতে এই ভুমির মালিক সুচতুর নুরুল আলম ভুঞা বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে সেটেলমেন্ট অফিসে ৩০ ধারায় এক আপত্তি দাখিল করেন। এরপর সে কিছুটা রাজনৈতিক প্রভাব ও অনেকটা তার আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে মানবিক অনুরোধ এবং সে নিজে আমাকে অনুনয় বিনয় করার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সরল বিশ্বাসে আমি তার সাথে একমত পোষন করি। এতে এই নুরুল আলম ভুঞা তার ভুমির মূল মালিক নুর নাহার খন্দকারের সাথে আমার অঙ্গীকারনামা সম্পাদন করিয়ে নেয়। এই নুরুল আলম ভুঁঞা তার সুবিধার্থে সরকারী আমিন সার্ভেয়ার নিয়োগ করিয়া মাপঝোপ দিয়া আমাকে আমার ‘ক’ প্লটের ০৩.৮৮ শতাংশ এবং আমার দক্ষিণে তার ৪.৬০ শতাংশ ‘খ’ প্লট নির্ধারন করিয়া দেয়। এতে প্রথমত: তার ভুমি “এল.সাইজ” এর পরিবর্তে “আই.সাইজ” হয়ে যায়। আমি আমার ভুমির দক্ষিণ পার্শ্বে তাকে ছেড়ে দিয়ে আমি পূর্ব দিকে অগ্রসর হই এবং তাকে চলাচলের জন্য পশ্চিম দিকে ৪ ফুট রাস্তা ছেড়ে দিই। এবং বিনিময়ে সে আমাকে ০.১৩ শতক জায়গা ছেড়ে দেয়। এসব মিলিয়ে আমার ‘ক’ প্লটের মোট ভুমির পরিমান ০৩.৮৮ শতক নির্ধারন করা হয়।
এরপর বিগত ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে আমার পারিবারিক জীবনে নেমে আসে এক মহা বিপর্যয়। বিগত ১৮/০৯/২০০৯ইং তারিখে আমার বড় ছেলে আবিদুর রহমান বাপ্পি (১২), খেলাচ্ছলে ৬ তলা বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে পড়ে মারা যায়। এ ঘটনায় আমি অত্যন্ত বিপদগ্রস্থ হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারাইয়া ফেলি। এ ঘটনায় ঐ সময় আমি ২ বছর যাবত মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলাম। ব্যবসা বাণিজ্য, সংসার ধর্ম সবই অর্থহীন মনে হত আমার কাছে। এ সুযোগে ধূর্ত ভুমি খেকো নুরুল আলম ভুঞা ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে (আমার ছেলের মৃত্যুর ১ মাস পরে) আমার নালিশী ভুমি হইতে ৪ ফুট (০.২৪ শতক) জায়গা জবর দখল করে সে তার ভুমিতে ৬ তলা দালানের নির্মান কাজ শুরু করে। সে অত্যন্ত দ্রুত ৮/১০ মাসের মধ্যে (২০১০ সালের মধ্যে) ৬তলা ভবনের নির্মান কাজ শেষ করে নেয়। এতে আমার ০৩.৮৮ শতকের নালিশী ভুমি ০৩.৬৪ শতকে পরিণত হয়ে ও অনেকটা বেকা ত্যাড়া হয়ে উন্নয়নের অনপুযোগী হয়ে পড়ে।
এদিকে আমি আমার ব্যবসার প্রয়োজনে পুবালি ব্যাংক, বাজার শাখা, ফেনী থেকে ৭০ লক্ষ টাকার একটি ব্যাংক ঋণ গ্রহন করি। কিন্তু উপরে বর্ণিত নানা পারিবারিক বিপর্যয়ের মুখে আমার ব্যবসায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমি এই নালিশী ভুমিটি বিক্রি করে ব্যাংক ঋণ পরিশাধ সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। কিন্তু উপরে বর্ণিত ভাবে আমার এই ভুমিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উন্নয়ন অনপুযোগী হয়ে পড়ায় বিগত ২ বৎসর যাবত ভুমিটি বিক্রয় করিতে পারিতেছি না। এতে আমি বিগত ২ বৎসর যাবত প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা হিসাবে ২ বছরের (২৪ মাসে) ২৪ লক্ষ টাকা ব্যাংক সুদ দিতে হয়েছে। নালিশী ভুমিটির মূল্য প্রতি শতাংশ ৪৫ লক্ষ টাকার স্থলে ৩৩ লক্ষ টাকা হয়ে প্রতি শতাংশের মূল্য- ১২ লক্ষ টাকা কমে গেছে। তাহা ছাড়া সে যে পরিমান ভুমি আত্মসাৎ করেছে তার মূল্য ৮.৫ লক্ষ টাকা। এতে সর্বসাকুল্যে আমার মোট ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান দাড়িয়েছে (২৪+৪৮+৮.৫) = ৮০.৫০ লক্ষ টাকা। এ বিষয়ে বিগত ২৪/০২/২০১৯ইং তারিখে সন্ধ্যা ৬.৩০ ঘটিকায় নুরুল আলম ভুঞাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও মিমাংসা করার কথা বলিলে সে আমাকে উল্টা হুমকি ধমকি দেয়। এবং নানা ভাবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে।
এতে আমি বাধ্য হয়ে বিগত ০৫/০৩/২০১৯ইং তারিখে ফেনী মডেল থানায় সাধারন ডাইরী নং- ২৫০ দায়ের করি। ফেনী মডেল থানায় এ ডায়েরী দায়ের করায় তাতে আমি আরো বেশী বেকায়দায় পড়ে যাই। ফেনী মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ জনাব আবুল কালাম আজাদ বিবাদীর সাথে বিশেষ স্বার্থের বিনিময়ে যোগসাজস করে বিষয়টি সালিশ মীমাংসা করে দেয়ার নামে আমাকে নানা হুমকি ধমকি দিয়ে হয়রানী করতে থাকে। আমাকে নানা অযৌক্তিক প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে থাকেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। এতে আমি নিজেকে অত্যন্ত অসহায় বোধ করতে থাকি। এ পুলিশ কর্মকর্তার আচরনে মনে হয় যেন আমিই অপরাধী। একজন ভুক্তভোগীর প্রতি পুলিশ কর্মকর্তার এরূপ আচরনে আমি হতভম্ব বনে যাই।
বিগত ২২/০৩/২০১৯ইং তারিখে ফেনী মডেল থানার ওসির পক্ষ থেকে একজন আমিন সার্ভেয়ার নিয়োগ দিয়ে আবার নালিশী সম্পত্তিটি পরিমাপ করা হয়। এতে প্রমানিত হয় যে, নুরুল আলম ০.২২ শতক ভুমি আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু ওসি আবুল কালাম আজাদ এই সার্ভেয়ার রিপোর্টটি অগ্রাহ্য করিয়া মাত্র ০.১০ শতাংশ আত্মসাৎ হয়েছে মর্মে ঘোষনা দেন। আমার ক্ষতিপূরন প্রথমে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার ও পরে ৫ লক্ষ টাকা নুরুল আলম আমাকে ক্ষতিপূরন দেয়ার রায় ঘোষনা দেন ওসি আবুল কালাম আজাদ। তাছাড়া আমার প্রাপ্ত ক্ষতিপূরনের ১৩ অংশ দিতে বলেন ওসি আবুল কালাম আজাদ। এ দিকে অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও গোপন সুত্রে জানিতে পারি যে, প্রতারক নুরুল আলমের সাথে ওসির ২ লক্ষ টাকার ঘুষের গোপন চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। ওসি আবুল কালাম আজাদ আমাকে বলে, ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে যাও কাল সকাল ১০ টার মধ্যে ০.২৪ শতক ভুমি নুরুল আলমকে রেজিষ্ট্রি করে দিয়ে আসবে। তার এই অবিচার সুলভ ও ষড়যন্ত্রমূলক রায়ের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে আমি থানা থেকে বেরিয়ে আসি। এরপর এই দূর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তার ইন্দনে প্রতারক নুরুল আলম আমার বিরুদ্ধে একটি সাধারন ডায়েরী ফেনী মডেল থানায় দায়ের করেন। ইহার ভিত্তিতে ফেনী মডেল থানা হইতে আমাকে বার বার ডাকিতেছে ও অনবরত হুমকি দিয়ে যাচেছ। ওসি আবুল কালাম আজাদ একজন দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বেচ্ছাচারী ও নিরীহ জনগনের প্রতি জুলুমবাজ পুলিশ কর্মকর্তা বলে গন মানুষের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। কিন্তু সে রয়েছে বছরের পর বছর বহাল তবিয়তে। ইতিমধ্যে ফেনীর পুলিশ সুপারের নিকট এ বিষয়ে আমি অভিযোগ দায়ের করিয়াছি।
‘ক’ তপছিল ভুমির পরিচয় :
প্লট যাহা থানা-ফেনীর ৯৩ নং রামপুর মৌজার এস.এ ৩০৪৯/৩০৫০/৩০৪৮ বি.এস ২৫৮৩ দাগের ০৩.৮৮ শতাংশ, যাহার প্লটের উত্তরাংশে ৫০-৪, পূর্বাংশে ৩র্৪-র্২র্ , পশ্চিমে-৩র্৪-র্৩র্ , দক্ষিণে- ৪র্৮-র্৬র্ এবং বিবাদী খ প্লটের উত্তরে- ৫র্৪-র্৪র্ , পশ্চিমে-৩৬র্-র্৯র্ , দক্ষিণে-৫র্৩-১র্৩র্ , পূর্বাংশে- ৩র্৫-র্৬র্ । যাহার স্থানীয় চৌহুদ্দী: উত্তরে- মোফাচ্ছেরুল হক খোন্দকার, দক্ষিণে- খ প্লটের নুর নাহার খোন্দকার, পূর্বে- মহি উদ্দিন খোন্দকার, পশ্চিমে- নিজস্ব চলাচলের রাস্তা, যাহা ফেনী বাজারের ইসলামপুর রোড়ের পশ্চিম পার্শ্বে খোন্দকার গলিতে অবস্থিত।