রাণীনগরের কুজাইল-আতাইকুলা স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা

এ বাশার (চঞ্চল),  নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কুজাইল-আতাইকুলা নামক স্থানে নওগাঁর ছোট যুমনা নদীর উপর দিয়ে চলাচলের জন্য ইজারাদারের উদ্যোগে নির্মিত বাঁশের সাঁকোই ওই এলাকার মানুষের যোগাযোগের মাত্র ভরসা। ডিজিটাল বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদের ভাল যোগাযোগের ভরসা হিসেবে ব্রীজের বদলে স্বাধীনতার পর থেকে এই জনপদে বসবাসরত্ব প্রায় ২৫ হাজার জনসাধারণের নওগাঁর ছোট যুমনা নদী পারাপার হতে বাঁশের দিয়ে নির্মাণ করা সাঁকোই তাদের জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক পাওনা। মিরাট, কালিকাপুর, হাটকালুপাড়া, গোনা ও কাশিমপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে যোগ হয়েছে নিবিড় বন্ধন হিসেবে এই সাঁকো। উপজেলার কাশিমপুর, গোনা ও মিরাট ইউনিয়নের অবহেলিত জনপদের মধ্যে সর্বরামপুর, কাশিমপুর, ডাঙ্গাপাড়া, এনায়েতপুর, মঙ্গলপাড়া, ভবানীপুর, পীরেরা, বয়না, বেতগাড়ী, দূর্গাপুর, কৃষ্ণপুর, মালঞ্চি, ঘোষগ্রাম, নান্দাইবাড়ি, বেতগাড়ী, আতাইকুলা, কুনৌজ, হামিদপুর, জালালগঞ্জ গ্রামসহ এই তিন ইউনিয়নের প্রায় ২৫হাজার লোকের যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন উন্নয়ন না হওয়ায় রাষ্ট্রের অনেক জরুরী সুযোগ-সুবিধা ও সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে এই তিন ইউনিয়নের বাসিন্দা। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই আধুনিকতার যুগে স্বাধীনতার ৪৫বছর পার হলেও নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কুজাইল-আতাইকুলা নামক স্থানে নওগাঁর ছোট যুমনা নদীর উপর দিয়ে পারাপারের জন্য একটি ব্রীজ নির্মাণ অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো অথবা নৌকা দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয় প্রায় ১৩টি গ্রামের কৃষক-শ্রমিক, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রায় ২৫ হাজার জনগন। বর্ষাকালে নৌকা যোগে নদী পারাপার হলেও নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে স্থানীয় ইজারাদারের উদ্যোগে তৈরি বাঁশের সাঁকোই এক মাত্র যোগাযোগের ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সেই সাঁকোটি বেশকিছু দিন ধরে সংস্কার না করায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় স্কুলগামী কমলমতী ছাত্র-ছাত্রী ও বৃদ্ধ বণিতা চলাচলের সময় নানান ধরণের অসুবিধার সম্মুখিন হতে হয়। এমনকি বৃষ্টিপাত শুরু হলেই নদীর  দুই পাড়ে কাঁদা-পানিতে একাকার হওয়ার কারণে সাঁকো থেকে পিছলে পানিতে পড়ে গুরুত্বর আহত হওয়ার মত ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটে।
জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার সদর থেকে প্রায় ০৮ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিনে কাশিমপুর-মিরাট ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেষে বুক চিড়ে বয়ে গেছে নওগাঁর ছোট যুমনা নদী। প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে এই নদীতে কোন প্রকার খনন কাজ না করায়  দিনদিন নাব্যতা সংকটের কারণে নদীর বুকে বিশেষ বিশেষ স্থানে চর জেগে উঠার কারণে কৃষি জমিতে সেচ ব্যবস্থা ও নৌ চলাচল স্বাভাবিক গতি ধরে রাখার জন্য এবং নদীর পানি প্রবাহ সচল রাখার লক্ষ্যে সরকারি পর্যায় থেকে কোন প্রকল্প অদ্যবদি হাতে নেওয়া হয়নি। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি যখন ফুলে-ফেপে উঠে তখন পারিবারিক প্রয়োজনে যাতায়াতের এক মাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় নৌকা। কিন্তু শুস্ক মৌসুমের শুরুতেই নদীর পানি কমতে থাকায় নৌকা চলাচল বন্ধ হলে জনস্বার্থেই ইজারাদার বাঁশের সাকো তৈরি করে চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু বড় কোন যানবাহন চলাচলের সুযোগ থাকে না। ফলে পায়ে হেঁটে সাঁকো পার হয়ে তিন ইউনিয়নের বসবাসকারি জনসাধারণ তাদের প্রয়োজনের তাগিদে জেলা ও উপজেলা সদরে যেতে হয়। যানবাহন চলাচলের উপযোগী সরাসরি কোন পথ না থাকায় স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানসহ অন্যান্য কৃষি পন্যসামগ্রী সহজ ভাবে বাজারজাত করতে না পারায় নায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে মোটা অংকের লোকসান গুনতে হয়। অনেকটা বাধ্য হয়েই ফড়িয়া ও মহাজনদের কাছে চলমান বাজার মূল্যের চেয়ে কমদামে কৃষি পন্য বিক্রি করতে বাধ্য হয়। কুজাইল-আতাইকুলা নামক স্থানে নওগাঁর ছোট যুমনা নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মানের এলাকাবাসির দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি থাকলেও সরকারি পর্যায়ে উন্নয়নের অনেক প্রকল্প আসে প্রকল্প যায় কিন্তু এই এলাকাবাসির ভাগ্য উন্নয়নের কারো যেন মাথা ব্যাথা নাই। অথচ উক্ত স্থানে ব্রীজটি নির্মান করা হলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত আতাইকুলার গণকবর ও রাণীনগর বানিজ্যিক নগরী হিসেবে খ্যাত কুজাইল বাজারের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন সহ তিন ইউনিয়নবাসীর মধ্যে যাতায়াতের জন্য নতুন দিগন্তের উন্মচন ঘটবে। বিশেষ করে ইরি-বোরো মৌসুমে ধান কাটাসহ আনা নেওয়া খুব অসুবিধা হয়। তাই এখানে একটি ব্রীজ নির্মান করা হলে সবাই উপকৃত হবে।
আতাইকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান আনোয়ার হোসেন জানান, কুজাইলা-আতাইকুলা নামক স্থানে যুমনা নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হলে অত্র এলাকায় যোগাযোগ, ব্যবসা ও শিক্ষা ব্যবস্থার আমল পরিবর্তন হবে। আমার প্রতিষ্ঠানে প্রায় তিনশত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে তারা জীবনের ঝুকি নিয়ে বর্ষা মৌসুমে নৌকাতে এবং শুষ্ক মৌসুমে নড়ভোড়ে এই সাঁকো দিয়েই কমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কুলে পড়ালেখার জন্য আসে। এখানে একটি ব্রীজ নির্মান করা হলে এই এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ সবাই উপকৃত হবে।
রাণীনগর উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো: মকলেছুর রহমান জানান, কুজাইল-আতাইকুলা নামক স্থানে নওগাঁর ছোট যুমনা নদীর উপর একটি ব্রীজ নিমার্ণের জন্য ঘটনাস্থল নির্ধারণ করে মাপ-যোগ ও ডিজাইন করে একটি প্রস্তাবনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এর প্রধান কার্যালয়ে অনুমোদনের জন্য গত মাসে প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সকল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে এখানে একটি ব্রীজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *