অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা

ক্রীড়া প্রতিবেদকঃ

একটা ফাইনাল ম্যাচের উত্তেজনা এর চেয়ে বেশি হতে পারত কি? দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে অনূর্ধ্ব ১৮ মেয়েদের পর্যায়ে সম্ভবত না! শিরোপার মীমাংসার ম্যাচে যে রকম হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের প্রত্যাশা করেন দর্শকেরা, তার সবটুকুই পাওয়া গিয়েছে আজ থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে। লড়াইয়ের শেষটাও বাংলাদেশের দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। অনূর্ধ্ব ১৮ মেয়েদের সাফে নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। একমাত্র গোলটি করেছেন ডিফেন্ডার মাসুরা পারভিন।

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নেপালকে অনায়াসে ২-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। অনেকেই ধরেই নিয়েছিলেন ফাইনালে বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে পাত্তাই পাবে না নেপাল দল। কিন্তু ম্যাচটা যে ফাইনাল, আর শিরোপার লড়াই কখনো বিনা যুদ্ধে হয় না, সেটা মনে করিয়ে দিল তাঁরা। প্রতিটা মুহূর্তে সিরাত জাহান স্বপ্না, কৃষ্ণা রাণী সরকারদের কাঁধে নিশ্বাস ফেলেছে হিমালয় কন্যারা। ম্যাচের উত্তেজনা ছিল এমন যে গোলের আগ পর্যন্ত সব সময় মনে হয়েছে ম্যাচটি জিততে পারে যেকোনো দলই। আর ৪৮ মিনিটে বাংলাদেশের গোলের পরও মনে হয়েছে নেপালের সমতায় ফেরা সময়ের ব্যাপার মাত্র। শেষ মিনিট পর্যন্ত উত্তেজনার পারদ ছুঁয়েছিল চূড়ান্ত উচ্চতা।

পাকিস্তানের জালে ১৭ গোল গোল দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল গোলাম রব্বানি ছোটনের শিষ্যরা। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে নেপালকে ২-১ গোলে হারানোর পর সেমিফাইনালে ভুটানকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। আজকের ম্যাচের আগেও বাংলাদেশের হাতে কাপ দেখছিল সবাই। কিন্তু এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে শিরোপা জিততে হবে বাংলাদেশকে, তা কে ভেবেছিল! কোনো দলই যে অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করেছে তা নয়। বরং উভয় দলের ঝড়ের গতিতে ওঠা আক্রমণগুলো থেমেছে প্রতিপক্ষ বক্সের সামনে। দুই দলের ডিফেন্ডাররাই তো আজকের ম্যাচের প্রাণ। আর ৪৮ মিনিটে ম্যাচের মীমাংসা তো করে দিয়েছেন বাংলাদেশের এক ডিফেন্ডারই-মাসুরা। মাঝমাঠের একটু ওপর থেকে মনিকা চাকমার নেওয়া ফ্রি কিক গোলমুখের সামনে থেকে হেডে জালে জড়িয়েছেন এই সেন্টারব্যাক। টুর্নামেন্টে এটিই তাঁর প্রথম গোল।

অথচ দুর্দান্ত প্রতাপ দেখিয়ে ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথম ১৫ মিনিট নেপালের গোল পোস্টের দিকে তাকাতেই পারছিল না। এরই মাঝে প্রতি আক্রমণ থেকে ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি হাতছাড়া করেন কৃষ্ণা রাণী সরকার। গ্রুপ পর্বে গোলরক্ষক রুপনা চাকমার হাই ভলি থেকে যেভাবে নেপাল ডিফেন্ডারদের গতিতে পেছনে ফেলে বলের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বল জালে পাঠিয়েছিলেন, তেমন একটি সুযোগই পেয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের এই ফরোয়ার্ড। কিন্তু পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে আসা গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে ভলি মেরে সুযোগটি নষ্ট করেন। ভাগ্যিস ৪৮ মিনিটে গোল করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন মাসুরা। না হলে তো কাঠগড়ায় দাঁড়াতে কৃষ্ণাকে।

মাসুরার গোলের পরও স্বস্তিতে থাকতে পারেননি বাংলাদেশের দর্শকেরা। এগিয়ে যাওয়ার দুই মিনিট পরেই তো জটলার মধ্যে থেকে নেওয়া নেপাল স্ট্রাইকারের ব্যাকহিল সাইডপোস্টে লেগেছিল। এ যাত্রায় ভাগ্যের ছোঁয়ায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ। এই চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামেই গত ১৮ আগস্ট কেঁদে মাঠ ছেড়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। অনূর্ধ্ব ১৫ সাফের ফাইনালে সেদিন ভারতের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে শিরোপা ছোঁয়া হয়নি বাংলাদেশের। ৪৮ দিন পরে এসে সেই চাংলিমিথাংয়েই শিরোপা উঁচু করে ধরল অনূর্ধ্ব ১৮ দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *