ঐক্যের সুশীল উদ্যোক্তারা হতাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় ঐক্যের ব্যপারে সমস্ত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উদ্যোগ নিয়েছিলেন।দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন। তারাই এখন আড়ালে চলে গেছে। তাঁরা এই উদ্যোগ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছেন। গত কয়েকদিন ধরে যারা উদ্যোক্তা সুশীল সমাজ ছিলেন, তাদের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। তারা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও আড়ালে আবডালে এই উদ্যোগের ব্যর্থতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন। মূলত যুক্তফ্রন্ট এবং ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপির ঐক্যের ব্যাপারে সুশীল সমাজের ভূমিকা ছিল। গত আগষ্ট মাসে বদিউল আলম মজুমদারের বাসভবনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিক্যাটের সৈজন্যে একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। নৈশভোজের আড়ালে যা ছিল জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে প্রথম বৈঠক। ঐ নৈশভোজের বৈঠকটিতে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এরকম একটি ঐক্যের ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছিলেন। বিশেষ করে তখন ড. কামাল হোসেনকে তিনি এই ঐক্য গঠনের জন্য অনুরোধ জানান। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিক্যাট সেই উদ্যোগে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে ড. বদিউল আলম মজুমদার এই তৎপরতার সঙ্গে আর নেই বলেই জানা গেছে। তার কোন তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। তিনি তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে এই ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

এই কর্মকান্ডের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি শুধু এর নেপথ্য থেকেই এর উদ্যোগ নেননি। বরং তিনি প্রকাশ্যে একাধিক বৈঠকে অংশগ্রহন করেছিলেন। ড. কামাল হোসেনের বাসায় উপস্থিত ছিলেন, এমনকি বি.চৌধুরীর বাসাতেও তাঁর সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। গত একসপ্তাহ ধরে লক্ষ্য করা যায়, তিনিও এ ব্যাপারে নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তিনিও ঘনিষ্ঠদের কাছে ঐক্যের ব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি মনে করছেন, প্রত্যেকের গোয়ার্তুমি, ইগো, ঐক্যের ব্যাপারে বিভিন্ন পাওয়া না পাওয়ার আগাম চিন্তা এই ঐক্যকে ভিন্নপথে প্রবাহিত করেছে। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করার ব্যাপারে যুক্তফ্রন্ট যে শর্ত দিয়েছে তার অধিকাংশই অযৌক্তিক। একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, ঐক্য প্রক্রিয়ার মাঝপথে ড. কামাল হোসেনের বিদেশ যাওয়া ঐক্যতে বিঘ্ন ঘটিয়েছে।

নেপথ্যে আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন সিপিবির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। গত দুই সপ্তাহ ধরে ঐক্যের ব্যাপারে তাঁরও কোন ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। এই ঐক্যের ব্যাপারে নেপথ্যে থেকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি গত দুই সপ্তাহ ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তার ব্যবসা ও জনসংযোগের মতো অন্যান্য কাজে ব্যস্ত। তিনি প্রথমে এই উদ্যোগের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী হয়েছিলেন। তাঁর মধ্যস্থতায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই এই আন্দোলন যখন ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না। ঐক্যের জন্য সামনে নানা রকম শর্ত আসছে। তখন তিনি হতাশ হয়েছেন। তিনিও ঐক্যের সঙ্গে এখন যুক্ত নন।

জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে নেপথ্যে যেসব সুশীল সমাজ ছিলেন, ঐক্যপ্রক্রিয়া চুরান্ত হওয়ার আগেই তাঁরা হতাশা থেকে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ও প্রশ্নের সৃষ্টি করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *