সংখ্যালঘু নির্যাতনকারি ও সম্পদদখলকারি ব্যাক্তিকে মনোনয়ন দেয়া যাবে না: ঐক্য পরিষদ

নিউজ ডেস্কঃ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অস্থিত্ত্ব রক্ষায় ৫ বা ৭ দপা দাবি আদায়ের লক্ষে শুক্রবার ( ২৮ সেপ্টেম্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের ২২টি সংগঠন সমূহের জাতীয় সমন্বয় কমিটিভুক্ত ২১টি সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।মহা সমাবেশে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে

দিকনির্দেশনামূলক বার্তা দিয়েছেন বক্তারা। তবে, নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে উজ্জীবিত রাখা ও নিজেদের শক্তি জানান দেয়ার লক্ষ্যেই শুক্রবার ( ২৮ সেপ্টেম্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহা সমাবেশের আড়ালে ব্যাপক লোক সমাগম ঝড়ো করা হয়েছে।

মহা সমাবেশ ব্যানারে হিন্দু নেতারা ছাড়াও নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, মানবাধীকার নেতা, বরেণ্য বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার উল্লেখযোগ্য নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন।নেতারা বক্তব্যের মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্পদায়ের উপর নির্যাতন -নিপিড়নের ইতিহাস তুলে দরেছেন।

বক্তব্যের মাধ্যমে নেতারা সরকারের কাছে দাবি তুলে দরে বলেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় স্থাপন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, ধর্মবৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্প্রতি প্রত্যর্পণ আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন, ভূমি কমিশন কার্যকর করা, পার্বত্য শান্তিচুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নে অতি দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া, দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত সমতলের আদিবাসীদের জন্যেও পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।

মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সহ অনেকে।

ঐক্য পরিষদের ৫ বা ৭ দপা দাবি সহ বিভিন্ন অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ও নির্যাতন বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা। সেই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবাই মিলে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বর্জন এবং সংখ্যালঘু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত যে কোনো বৈষম্য ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত বা সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত এমন ব্যক্তিকে মনোনয়ন না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয় রাজনৈতিক দলগুলোকে।

মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমরা যে বাংলাদেশ অর্জন করে ছিলাম সে বাংলাদেশে সব দরনের মানুষ সোমান অধিকার নিয়ে বেচেঁ থাকার কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যখন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর নির্যাতন -নিপিড়ন শুরু হয় তখন প্রতিবেশীরাও এগিয়ে আসে না। রাজনৈতিক নেতারা এবং প্রশাসন দায়িত্ত্ব পালন করে না। সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের কারনে অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তবে, আমি জানি বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষ সাম্প্রদায়িক নয়। সব শক্তি দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা প্রতিহত করতে হবে।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, স্বাধীণ বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের সাম্প্রদায়িকতা ফিরে এসেছে। এই সাম্প্রদায়িকতাকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে। রাষ্ট্রের কাছে সংখ্যালঘুদের যে প্রত্যাশা, সেটা রাষ্ট্র পূরণ করতে পারছে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, এ সমাবেশ সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষার সমাবেশ এবং বৈষম্য মোকাবেলার সমাবেশ। সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের সমাবেশ। কিন্তু আপনেরা যারা ক্ষমতায় আছেন তারা কি ভাবে দেখছেন সংখ্যালঘুদের সমস্যাগুলো ? তবে, যারা ক্ষমতায় আছেন আপনেরা বলছেন কৌশলের কারনে কিছু করা যাচ্ছে না। কিন্তু কৌশলের কারনে আপনেরা নিরব থাকা বা পিচু হাটাকে আত্ম সমপণ করা। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল ক্ষমতায় থেকে যদি আপনেরা কৌশলের কাছে আত্ম সমপণ করেন বা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এক বিন্দু হারালে আমরা আপনাদের দিকে বার -বার আঙ্গুল তুলবো। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংখ্যালঘুদের প্রতি শত আন্তরিক হওয়ার পরও কেন সমস্যাগুলো সমাধান হচ্ছে না ? প্রধানমন্ত্রী যদি র্দূবল জায়গাটা চিহৃিত না করেন বা প্রকাশ না করেন তা হলে তিনি বার -বার সেই র্দূবল জায়গায় বিপদে পড়বেন।

প্রধানমন্ত্রী আপনার র্দূবল জায়গা কোথায় ? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অত্যান্ত পবিত্র। পবিত্র স্থানে আঘাত করবেন না। বাংলাদেশ সব মানুষের দেশ হোক এ কামনা করি।

ন্যাপ নেতা পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, এ সমাবেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বাচানোর সমাবেশ। ৪৭ বছর পরেও সংখ্যালঘুদের জন্য মু্ক্তিযুদ্ধ চলছে। পাকিস্তান আমাদের পবিত্র ধর্মকে বর্ণ বানিয়েছে। বঙ্গবন্ধু সাড়ে সাত কোটি মানুষকে ঐক্য করেছেন এবং ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ অর্জন করে দিয়েছেন। কিন্তু দেশ স্বাধীনের মাত্র তিন বছর পর যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তারা পাকিস্তানি, তারা জামায়াতি ইসলাম । তারাই সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করেন। সেই জামায়াতি ইসলামকে সব কিছু থেকে বাদ দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যারঘুদের উপর কেন রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাস হবে। দায় মুক্তির সংকৃত মানতে পারবো না। বঙ্গবন্ধুর দল ক্ষমতায় না থাকলে বাংলাদেশে একদিনে একলক্ষ মানুষ খুন হবে। আমরা সেই রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই।

এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ। বিনাযুদ্ধে আমরা সাম্প্রদায়িকতাবাদিদের কাছে পরাজিত হতে পারি না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই দেশকে সাম্প্রদায়িক দেখতে চাই না। রামু, নাসিরনগর, সাতক্ষিরা, গোবিন্দগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে কেন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হবে। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।

শাহরিয়ার কবির বলেন, ২০০১ সাল থেকেই সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নেমে আসে, যাহা স্বাধীনদেশে কাম্যনয়। ২০১৪ সালে জাতিয় নির্বাচনের আগে ও পরে ভয়াবহ ভাবে নির্যাতন করেছে। আগামী নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু সু-রক্ষা আইন বাস্তবায়ন জরুরী। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও সংখ্যালঘু নির্যাতন মেনে নেয়া যায় না। যখনই নির্বাচন আসে তখনই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-আক্রমণ নেমে আসে। এই অত্যাচারীদের শাস্তি দিতে হবে। আগামী নির্বাচনে একটা সংখ্যালঘু নির্যাতন হতে দেব না। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নির্বাচনের আগে থেকে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। নির্বাচন উৎসব মূখর হতে হবে, বেদনা দায়ক নয়।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নৌকায় জামায়াত – মৌলবাদী দেখতে চাই না। অনেক জামায়াত -মৌলবাদী আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করতে চাচ্ছে। কোন জামায়াত- মৌলবাদীকে আওয়ামীলীগ থেকে নমিনেশন দেয়া যাবে না। জামায়াত- মৌলবাদীরা ৫ লক্ষ নারী নির্যাতন করেছিল। তারা নির্বাচনী প্রচারনায় ধর্মব্যবহার করে।জামায়াত- মৌলবাদীরা মুক্তযুদ্ধের প্রতি সম্মান দেখান না। দেশের সকল মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান রাখতে হবে এবং দায়বন্ধ থাকতে হবে। ফেসবুকের মাধ্যমে বা মিডিয়ার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অবমাননা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।৭২ এর সংবিধান মানতে হবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ধারায় নিয়ে যাওয়ার হয়। তখনই ১৯৮৮ সালে হিন্দু -বৌদ্ধ -খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জম্ম হয়েছে।

বৌদ্ধ পণ্ডিত ড. চিনারোধ ভিক্ষু বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ ই মার্চের ভাষন শুনতে এসেছেন আজ কেন এসেছেন ? আজ এসেছেন শান্তিতে বেচেঁ থাকার অধিকার আদায়ের বাদীতে। আসলে এখানে যারা এসেছেন কেউই ভালো নেই বলেই এখানে আসা। সবাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্য হওয়া। দাবী আদায় হওয়া পর্যস্ত সবাই ঐক্য থাকবে।

খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি ততপথ রয়েছে।স্বাধীনতার স্বপক্ষে শক্তি ঐক্য হতে হবে। দেশ সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে দেয়া হবে না।

আদিবাসী নেতা সঞ্জিব দ্রং বলেন, ৪৭ বছর পরেও স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া যায় নি। এমন দেশ আমরা চাই না। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও আদিবাসীরা দেশ ছাঁড়তে হচ্ছে। অথচ ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গার প্রতি আমরা মানবতা দেখাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, আদিবাসী কোটা বাতিল করা যাবে না।

জাতীয় সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে ৫ দফা ও ৭ দফা সম্বলিত এ ঘোষণা পাঠ করেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *