রোহিঙ্গা নিধন নিয়ে মিথ্যাচার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর

নিজস্ব প্রতিবেদক :

মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ছবি ব্যবহার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলছে, এটি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের হাতে নিহত স্থানীয় বৌদ্ধদের ছবি। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রকাশিত একটি বইয়ে ভুয়া তথ্য ও ছবি দিয়ে বিভ্রান্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। প্রকৃতপক্ষে তাঁদের প্রকাশিত সকল ছবিই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙ্গালিদের উপর চালানো পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার ছবি- যেটি ধরা পড়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের অনুসন্ধানে।

ওই বইয়ে থাকা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছবি ও তথ্যই ভুয়া। এতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানের বর্বরতার ছবিকে রাখাইনে রোহিঙ্গা কর্তৃক বৌদ্ধ নিধনের ছবি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।

শুক্রবার এক বিশেষে প্রতিবেদনে রয়টার্স বলেছে, ‘মিয়ানমারের রাজনীতি ও সেনাবাহিনী: প্রথম পর্ব’ নামে ১১৭ পৃষ্ঠার ওই বইয়ে গত বছরের আগস্টের পর শুরু হওয়া সামরিক অভিযান নিয়ে সেনাবাহিনীর ভাষ্য তুলে ধরা হয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর হিসাবে, সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে পাইকারি হত্যা, ধর্ষণ আর জ্বালাও-পোড়াওর মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।

ওই বইয়ে প্রকাশ করা হয়েছে, এক লোক কৃষিকাজে ব্যবহৃত নিড়ানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুই লাশের পাশে। ক্যাপশনে বলা হয়েছে- ‘স্থানীয়দের নির্মমভাবে হত্যা করেছে বাঙালিরা’।

১৯৪০ এর দশকে মিয়ানমারের দাঙ্গার অধ্যায়ে একটি ছবির বিবরণে বর্মী ভাষায় রোহিঙ্গাদের হাতে বৌদ্ধ হত্যার ছবি হিসেবে বোঝানো হয়েছে। তবে রয়টার্সের অনুসন্ধানে ছবিটি আসলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বর্ববতার বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

রুয়ান্ডায় সহিংসতার পর ১৯৯৬ সালে শরণার্থীদের দেশত্যাগের এই ছবিটি তুলেছেন পিটাসবার্গ পোস্ট-গেজেটের আলোকচিত্রী মার্থা রিয়াল। একই ছবি সাদা-কালোতে বদলে নিয়ে ছাপানো হয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বইয়ে, বলা হয়েছে ব্রিটিশ আমলে বাঙালিরা প্রবেশ করছে মিয়ানমারে।

বইটিতে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। সহিংসতার জন্য বাঙালিদের দোষারোপ করা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বইটিতে আরো দুটি ভুয়া ছবি পাওয়া গেছে যেগুলো রাখাইন অঞ্চলের আর্কাইভ ছবি বলে দাবি করা হয়েছে।

গত জুলাইয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক রিলেশনস অ্যান্ড সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার’ থেকে প্রকাশিত ওই বইয়ে তিনটি ভুয়া ছবি পাওয়া গেছে যেগুলো রাখাইন অঞ্চলের আর্কাইভ ছবি বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু রয়টার্সের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই তিনটি ছবির মধ্যে দুটি তোলা হয়েছে বাংলাদেশ ও তানজানিয়ায়। মিয়ানমার ছেড়ে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের আরেকটি ছবির ক্যাপশনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতাকে জাতিগত নিধন হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

মিথ্যাচার ও ভুয়া ছবির বিষয়ে মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের কাছে জানতে চাইলে তাদের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *