রাজবাড়ী প্রতিনিধি: রাজবাড়ী শহরের বড়পুলের বহুল আলোচিত ডাঃ রতন ক্লিনিকে ২৮ এপ্রিল বিকেলে চিকিৎসার অবহেলায় রেবেকা বেগম(২৬) নামে এক সিজারিয়ান নারীর অকাল মৃত্যু। ক্লিনিক এ তালা দিয়ে -কর্তৃপক্ষ পলাতক।
অবশেষে লাশের দরদাম ঠিক হলো ১লক্ষ ২৫হাজার টাকা মিটে গেলো সকল সমস্যা থাকলো না কোন ঝামেলা। এভাবেই চলে মৃত মানুষ নিয়ে রমরমা ব্যবসা।
আর কত মানুষের মৃত্যু হলে বন্ধ হবে এমন ক্লিনিকের গুলো র রমরমা বাণিজ্যে।।
মৃত রেবেকা বেগম কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের চর কেষ্টপুর গ্রামের নজরুল শেখের স্ত্রী।
মৃত রেবেকার মা সুফিয়া বেগম জানান, তার মেয়ে রেবেকাকে ২৮শে এপ্রিল শনিবার সকাল ১০টায় ডাঃ রতন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। দুপুর ১টার দিকে ডাঃ এস.এম.এ হান্নান ও তার সহযোগি চিকিৎসকেরা তার মেয়েকে সিজার করেন। সিজারের মাধ্যমে রেবেকার একটি মেয়ে সন্তান হয়। এরপর তাকে বেডে নেয়া হলে ক্লিনিকের নার্স বা কর্তব্যরত কোন ডাক্তার রেবেকার খোঁজ নেননি।
ফলে রেবেকার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে বিকেল ৪টার দিকে ডাঃ এস.এম.এ হান্নান এসে রুগির অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তারাহুরু করে নিজেই এ্যাম্বুলেন্স এনে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাধ্য করে রুগির স্বজনদের। এক প্রকার তারা বাধ্য হয়েই ডাক্তারের কথা মতো রেবেকাকে ফরিদপুর নিয়ে যাওয়া হলে পথেই সে মারা যায়।
এ ঘটনার পর সন্ধ্যার দিকে রেবেকাকে ডাঃ রতন ক্লিনিকের সামনে নিয়ে আসা হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
তখন সেখানে উত্তেজনা দেখা দিলে খবর পেয়ে রাজবাড়ী থানা পুলিশের একটি দল সেখানে আসে। মৃত রোগীর স্বজনদের আহাজারীতে এলাকার বাতাস ভারী হলেও মৃতার বাড়ী ও পাশ্ববর্তী এলাকার কতিপয় দালাল চক্র সেখানে উপস্থিত হয়ে ১লক্ষ টাকায় ঘটনাটি মিমাংসা করতে রোগীর স্বজন ও পুলিশকে ম্যানেজ করতে তৎপর হয়ে ওঠে।
নিহতের মা সুফিয়া বেগম এ সময় সাংবাদিকদের কাছে, তার মেয়েকে চিকিৎসা জনিত অবহেলার ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও সিজারকারী চিকিৎসকেদের দায়ী করে শাস্তির দাবী জানান।
এ বিষয়ে সিজারকারী চিকিৎসক রাজবাড়ী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ এস.এম.এ হান্নান বলেন, তিনি সফল অপারেশন করার পর রেবেকা বেগম ও তার সদ্যজাত শিশু কন্যাকে বেডে দিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করে আসেন।
কিন্তু ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সসহ অন্যান্যরা তার প্রতি অবহেলা করায় রেবেকা খাতুন হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে গেলে তাকে ফরিদপুর রেফার করা হয়েছিল।
ডাঃ এস.এম.এ হান্নান আরো বলেন, সিজারকালে বা পরে তার কোন ধরণের অবহেলা ছিল না এবং তার ভুলে রেবেকার মৃত্যু হয়নি।
সর্বশেষ এ খবর লেখা পর্যন্ত রাত ১১টায় মৃতার সুফিয়া বেগমকে ডাঃ রতন ক্লিনিকের সামনে এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে সদ্যজাত নাতনী শিশুকে কোলে নিয়ে এবং মৃত মেয়ে রেবেকা বেগমের লাশ পাশে রেখে বিচারের দাবীতে অবস্থান করছিল।
নিহতের মামাতো ভাই মোঃ সেলিম রেজা জানান, তার বোন রোকেয়া বেগম কে প্রথমে রাজবাড়ী পরিবার পরিকল্পনা (মেটেনিটি তে নেওয়া হলে সেখান থেকে তাদের সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সদর হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখানেও ভর্তি নেওয়া হয়নি। পরে বাবলু নামে এক ঔষধ ব্যবসায়ীর কথা মত রতন ক্লিনিকে সকাল ১০টার দিকে ৬হাজার টাকা মেটিয়ে ভর্তি করা হয়। পর সিজার করে বেলা ১টার দিকে ডাক্তার হান্নান। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রুগির অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ডাক্তার হান্নান নিজেই এম্বুলেন্স ঠিক করে তারাহুরু করে ফরিদপুর পাঠিয়ে দেন।। পরে ফরিদপুর নেওয়ার পথেই আমার বনের মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে ক্লিনিকের পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এসএম গোলাম মোস্তাফা জানান, সকাল ১০টার দিকে রেবেকা নামের রুগি আমাদের ক্লিনিক ভর্তি হয়। পরে তাদের পছন্দমত ডাক্তার হান্নান কে দিয়ে দুপুর ১টার দিকে সিজার করা নো হয়। পরে বিকেল ৪টার দিকে রুগির অবস্থা খারাপের দিকে গেলে ডাক্তার কে ফোন করি ডাক্তার এসে তাকে ফরিদপুর পাঠান। পরে সন্ধ্যার দিকে মৃত রুগি কে এনে ক্লিনিক এর সামনে অবস্থান করে।
এরআগে গত ৫ই এপ্রিল গভীর রাতে ডাঃ রতন ক্লিনিকের অভ্যন্তরে নাইট গার্ড কলেজ ছাত্র সোহানুর রহমান (২০)-এর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায়ও তোলপাড় ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানায় সোহান হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে।