বীর প্রতীক হামিদুল হক’র উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন | বাংলারদর্পন

নিউজ ডেস্ক :

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া রণাঙ্গনের বীরযোদ্ধা টাঙ্গাইলের সখীপুরের কচুয়া গ্রামের বীর প্রতীক হামিদুল হক (৭৪) জীবন যুদ্ধে পরাজিত হতে বসেছেন। দীর্ঘদিন ধরে উন্নতমানের চিকিত্সার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে দিন কাটছে এ বীরযোদ্ধার। তার দিন কাটছে বাসায় শুয়ে বসে। তার দুই চোখ বেঁয়ে অঝরে ঝরছে পানি, তাকিয়ে আছেন শেষ নিয়তির দিকে। যে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে মাইলের পর মাইল হেঁটে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শত্রুর ওপর। আজ স্বাধীন নিজ দেশেই বিনা চিকিত্সায় ধুঁকে ধুঁকে মরতে বসেছেন তিনি।

 

কখন যে নিভে যায় দীপশিখা। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে মানুষটি শিক্ষকতা করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন। দীক্ষিত করেছেন কত শত মানুষকে। অর্থ-সম্পদের পেছনে ছোটেননি কখনো। চাননি তেমন কিছুই। সবার কাছ থেকে পেয়েছেন সম্মান-শ্রদ্ধা। তাতেই তুষ্ট ছিলেন। কখনো অসহায় বোধ না করা এই মানুষটি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আজ বড়ই অসহায়। নানা রোগভোগে তাঁর জীবন সংশয়ে, মৃত্যুশয্যায়। অর্থাভাবে উন্নতমানের চিকিত্সা করাতে পারছেন না তিনি।

 

শুক্রবার বিকেলে হামিদুল হক বলেন, দুই চোখ ঝাঁপসা হয়েছে অনেক দিন আগেই। কানে একদমই কম শোনেন। অন্যের সাহায্য ছাড়া হাঁটাচলা করতে পারেন না। খাবার-দাবারে রুচি নেই। যত্ সামান্য তরল খাবারে দিন-রাত পার। তিন মাসের অধিক হয়েছে শরীর থেকে জ্বর নামছেই না। শ্বাসকষ্টজনিত রোগে দম যায় আর আসে…।

 

হামিদুল হক বীর প্রতীক বলেন, ১৯৭১ সাল। ৫ মার্চ। ভোর বেলা। ঢাকার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুস সামাদের হলে উঠলেন তিনি। আবদুস সামাদ তার বাল্যবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য ৭ মার্চ ভোরবেলা চলে গেলেন রেসকোর্স ময়দানে। খুব কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে উদ্বুদ্ধ হলেন। হামিদুল হক ১৯৭১ সালে স্থানীয় কচুয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। দেশের অভ্যন্তরে টাঙ্গাইলে গঠিত কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে কালিহাতীর বল্লাসহ আরো কয়েক স্থানে যুদ্ধ করেন। পাশাপাশি কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক বিভাগেরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব পালন করেন।

 

মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য হামিদুল হককে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৪২২।

 

হামিদুল হক বীর প্রতীক আরো বলেন, ১৯৭২ ও ৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার একাধিকবার সাক্ষাত্ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক স্নেহ করতেন; বলতেই তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন…।

 

১৯৯০ সালে সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। বর্তমানে সখীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম হাবিল উদ্দিন, মা কছিরন নেসা, স্ত্রী রোমেচা বেগম। তাঁদের চার মেয়ে, এক ছেলে।

 

সখীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এম ও গণি বলেন, ‘হামিদুল হক বীরপ্রতীক ১১ নম্বর সেক্টরে কাদেরিয়া বাহিনীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমানে তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছেন। পরিবারে আয়ের উত্স তেমন নেই। একজন রোগীর যে পরিমাণ পুষ্টিকর খাওয়ার প্রয়োজন তা পাচ্ছেন না। আমি চাই সরকার যদি তাঁর সুচিকিত্সার এগিয়ে আসুক।’

 

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের দায়িত্বে থাকা ও সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী সরকার রাখী বলেন, ‘হামিদুল হক বীরপ্রতীকের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উন্নত চিকিত্সার জন্য জানানো হবে।

 

(সূত্রঃ বাংলার অভিযান ২৪’ডটকম)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *