ফাস্ট ট্র্যাকের সবগুলোতেই অগ্রগতি, পদ্মাসেতু ৫৩% > বাংলারদর্পন

 

ডেস্ক রিপোর্ট :

দ্রুত এগিয়ে চলছে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মূল প্রকল্প পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ। ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত সেতু নির্মাণ ৫৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। এছাড়া সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় নদীশাসন কাজ এগিয়েছে ৩৪ দশমিক ৪০ শতাংশ।

সেতু সংশ্লিষ্ট অন্য কাজগুলোর মধ্যে জাজিরা প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আর শতভাগ কাজ হয়ে গেছে- মাওয়া প্রান্তে অ্যাপ্রোচ সড়ক, সার্ভিস এরিয়া-২ এর কাজ। এই প্রকল্পের অর্থ ব্যয় হয়েছে ৫১ শতাংশ। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে পদ্মাসেতু প্রকল্প। এর মধ্যে শুরু থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৫০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের সবশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব প্রাপ্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম সারাবাংলাকে বলেন, ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলো এগিয়ে চলছে। চলতি অর্থবছরে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এসব অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পের বাস্তবায়ন যেন কোনভাবেই বাধাগ্রস্থ না হয়।

প্রতিবেদনের ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত অন্যান্য প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দ্বিতীয় পর্যায়ে মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এগিয়ে চলেছে। এই প্রকল্পের বরাদ্দ ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত দুটি চুক্তির আওতায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের আওতায় ১২০০ মেগাওয়াটের ২টি ইউনিটের মাধ্যমে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। প্রকল্পের মূল কাজ প্রথম রিয়্যাক্টর স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তাদের জন্য ভবন তৈরির কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায় কাজের ৯৫ দশমিক ৪৬ অগ্রগতি হয়েছে।

এদিকে, রাজধানীর মেট্রোরেল প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৮৮১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত লাইন স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-১ এর অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-২ এর কাজ চলছে। যার আওতায় আগারগাঁও থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, মতিঝিল পর্যন্ত লাইন বসানো হবে।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ আর আর্থিক অগ্রগতি ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পরামর্শকরা কাজ শুরু করেছেন। মাটি ভরাটের কাজ ১০০ শতাংশ, সীমানা প্রাচীর ৯৮ শতাংশ, সংযোগ সড়ক ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৯৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। প্রকল্পের জন্য দেড় হাজার একর জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ। এছাড়া ওনারস ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ এবং জমি সংক্রান্ত দায়িত্ব, বাউন্ডারি ফেন্সিং কাজ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত ক্লিয়ারেন্স এর কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৯১৪কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম পরিচালননার জন্য ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহন, ওয়্যার হাউজ নির্মাণ, সার্ভে বোর্ট, পাইট ভেসেল ইত্যাদি কেনা হচ্ছে বলে অগ্রগতি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ ও দেশের ফাস্ট ট্রাকের অংশ হিসেবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯ শতাংশ। এছাড়া আর্থিক অগ্রগতি ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি বিল্ড ওন অপারেট এন্ড ট্রান্সফার (বিওওটি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গত বছরের ১৮ জুলাই টার্মিনাল ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। জিও টেকনিক্যাল সার্ভের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে ডিজাইনের কাজ চলছে। সেই সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। মহেশখালী-আনোয়ারা, আনোয়ারা-ফৌজদারহাট এবং চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের জন্য ১ বছরের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

রামু-মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- প্রকল্পের জন্য কক্সবাজার এলাকায় জমি পাওয়া গেলেও চট্টগ্রামে জমি পাওয়া যায়নি। পরামর্শক নিয়োগের কাজ চলছে। লট-১ ও লট-২ এর কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। রিসেটেলমেন্টের জন্য এনজিও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৬৬১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *