ডেস্ক রিপোর্ট :
০১ জানুয়ারি ২০১৮।
২০১৬ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও ক্ষমতায় বসেন ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি। হিলারি ক্লিনটনের মতো অভিজ্ঞ ও তুখোড় রাজনীতিবিদকে হারিয়ে রাজনীতিতে নিতান্তই নবিস ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন, তখন সেটাকে ‘ট্রাম্পের ওভারট্রাম্প’ বলেছেন বিশ্লেষকরা।
হোয়াইট হাউসে বসেই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ (সবার আগে যুক্তরাষ্ট্র) নীতির ঘোষণা দেন তিনি। এরপর প্রায় এক বছর হতে চলল। এখন পর্যন্ত এই আনাড়ি খেলোয়াড়ের কর্মকাণ্ডকে এক বাক্যে রূপান্তর করলে দাঁড়ায়, ‘সবার আগে ট্রাম্প’।
নিজের লক্ষ্য পূরণে দেশে বা দেশের বাইরে কাউকে তোয়াক্কা করছেন না ট্রাম্প। যারাই তার কাজে বাগড়া দিয়েছেন তারা হয় বরখাস্ত হয়েছেন, না হয় নাজেহাল। অনেকে তার কর্মকাণ্ডের নীরব প্রতিবাদস্বরূপ নিজেই পদত্যাগ করেছেন।
আবাসন, হোটেল ও ক্যাসিনো ব্যবসা নিয়ে জীবনের বড় অংশ কাটানো ট্রাম্প হঠাৎই রাজনীতিতে প্রবেশ করে হিলারিকে হারিয়ে পুরো বিশ্বকে চমকে দেন। সেই বিস্ময় এখনও চলছে এবং ক্ষণে ক্ষণে ভড়কে দিচ্ছে বিশ্বকে। হোয়াইট হাউসে বসার এক সপ্তাহের মধ্যে অধ্যাদেশের মাধ্যমে ২৭ জানুয়ারি মুসলিমপ্রধান সাতটি দেশের মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ট্রাম্প।
দেশগুলো হল- ইরান, সিরিয়া, ইরাক, সোমালিয়া, সুদান, লিবিয়া ও ইয়েমেন। এ নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জে হেরে গিয়ে ইরাককে বাদ রেখে ছয়টি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা দেন ট্রাম্প। কিন্তু বারবার আদালত তা আটকে দিয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার মাত্র তিন দিনের মাথায় ২৩ জানুয়ারি ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপে (টিপিপি) যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বাতিল করেন।
১২ সদস্য রাষ্ট্রের এ চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থাকলে বিশ্বের মোট জিডিপির ৪০ ভাগ অর্থাৎ প্রায় ২৭.৪ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় হতো। এরপর ১ জুন জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি ‘নিছক ধাপ্পাবাজি’ আখ্যা দিয়ে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এমনকি তিনি ছুরি চালান সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জনপ্রিয় স্বাস্থ্যনীতি ওবামাকেয়ারের বুকে। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন স্বাস্থ্যনীতি প্রতিনিধি পরিষদে ভোটাভুটিতে উৎরে গেলেও সিনেটে তা আটকে যায়।
এ ছাড়া উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের ঠেলাঠেলি ও হুমকি-ধামকিতে কখন না জানি পরমাণুযুদ্ধ বেধে যায়- সেই শঙ্কা কাজ করছে বিশ্লেষকদের মনে। ট্রাম্পের ক্ষমতার এক বছরে উত্তর কোরিয়া পাঁচটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১টি পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। কোরীয় উপদ্বীপের উত্তেজনার মধ্যে এশিয়ার পাঁচ দেশে দীর্ঘ ১২ দিনের সফর করেন ট্রাম্প।
এ সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিশ্ব নেতাদের মুখোমুখি হন তিনি। উত্তর কোরিয়ার ইস্যুতে মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে সহায়তা এবং পিয়ংইয়ংয়ের ওপর চীনের চাপ বাড়ানোর বায়না নিয়ে ট্রাম্প এ সফরে যান। কিন্তু তাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে বলে দাবি বিশ্লেষকদের।