লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদল চালাচ্ছেন ২০ বাবা -বাংলারদর্পন

 

বাংলারদর্পন ডেস্কঃ

ব্যক্তি ও পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি চলছে লক্ষ্মীপুরে। জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আত্মীয়তার সম্পর্ক যেন শেষ কথা। দলীয় সিদ্ধান্ত আসছে দুটি পরিবার থেকে। বিএনপিতে চলছে এক নেতার দাপট। তাঁর স্বজনেরা পাচ্ছেন দলীয় পদ। দুটি দলের সাধারণ নেতা-কর্মী বলছেন, জেলার রাজনীতিতে যোগ্যতার চেয়ে ‘সম্পর্ক’ এবং ‘নিজের লোক’ পরিচয় এখন বড় হয়ে উঠেছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাবারা। প্রায় সাত বছর আগে গঠিত জেলা কমিটির সভাপতি, তিন সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ ২০ জন নেতা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘর-সংসার করছেন। ১৫১ সদস্যের কমিটির আরও অন্তত ৩০ জন ব্যবসা ও ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই কমিটির কতজনের বর্তমানে ছাত্রত্ব রয়েছে তা বলতে পারেননি বিবাহিত সভাপতি।

জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হারুনুর রশিদ ১০ বছর আগে বিয়ে করেন। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সাত বছর ধরে ঠিকাদারি করছেন তিনি। সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম (মামুন) পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেন। তিনিও এক সন্তানের বাবা। এখন ওষুধের ব্যবসা করছেন।

জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি ফয়েজ আহম্মেদ বিয়ে করেছেন ১০ বছর আগে। তাঁর বড় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। অন্য দুই সহসভাপতি বদরুল ইসলাম ও হাবিবুর রহমান ২০১৫ সালে বিয়ে করেন। যুগ্ম সম্পাদক শামছুর রহমান গত বছর বিয়ে করেন। এ ছাড়া কমিটির আরও ১৪ জন নেতা বিয়ের পর ঘর-সংসার নিয়ে ব্যস্ত।

বিবাহিতদের বাইরে অন্য নেতাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। এর মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক এম মমিনের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ছয় বছর আগে। এখন ব্যবসা করছেন তিনি।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির অনেক নেতাই বিবাহিত এটি সত্য। কিন্তু তাঁরা দলের সব কর্মসূচিতে অংশ নেন।

সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম বলেন, যখন তিনি দায়িত্ব পান তখন বিয়ে করেননি। কমিটির বেশির ভাগ সদস্যের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুনদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা।

ছাত্রদলের অনুমোদিত কোনো গঠনতন্ত্র নেই। একটি খসড়া গঠনতন্ত্র থাকলেও তাতে বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এতে বলা আছে, মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীরা ছাত্রদলের সদস্য হতে পারবেন। তবে বিবাহিত, ৪০ পেরিয়ে যাওয়া এবং ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়া কাউকে নেতৃত্বে না আনার অলিখিত নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা চলে। জেলা কমিটির মেয়াদ তিন বছর। তবে লক্ষ্মীপুর ছাত্রদলের কমিটি চলছে প্রায় সাত বছর ধরে।

ছাত্রদেরই ছাত্রদল করা উচিত জানিয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মামুনুর রশিদ মুঠোফোনে

প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা বিবাহিত তাঁদের ছাত্রদল করা ঠিক নয়। লক্ষ্মীপুর জেলার ছাত্রদলের কমিটি সবচেয়ে পুরনো। জেলা ছাত্রদলের কার্যকারী কমিটির শীর্ষনেতারা অনেকেই বিবাহিত এটি জানেন তাঁরা। কিন্তু নানা কারণে সেখানে নতুন কমিটি করা যায়নি। ছাত্রত্ব রয়েছে এবং বিবাহিত নয় এমন নেতাদের দিয়ে আগামী বছরের শুরুতে নতুন কমিটি করা হবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির তিনজন দায়িত্বশীল নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলো কে বলেন, ছাত্রদলের নেতারা থাকবেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে তাঁরা কাজ করবেন। কিন্তু জেলা ছাত্রদলের আদু ভাই নেতারা ব্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে। পদ আকড়ে ধরে রাখতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *