জাতির উদ্দেশে সু চি: রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আলোচনা চলছে

 

বাংলার দর্পন ডটকম  | ১৩ অক্টোবর ২০১৭।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি বলেছেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দুবার এ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অতীতের সাফল্যের ধারায় এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আলোচনা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সু চি এসব কথা বলেন। তাঁর এই ভাষণ রাষ্ট্রীয় টিভিতে সম্প্রচারিত হয়েছে। ভাষণের ইংরেজি তরজমা প্রচার করেছে সু চির দপ্তরের ফেসবুক পেজ।

সু চি বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, রাখাইন ইস্যুতে বিশ্বের মনোযোগ ছিল ব্যাপক। গত বছরের অক্টোবরে পুলিশ ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে যার শুরু। চলতি বছরের আগস্টে আবারও একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই হামলার পর থেকে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। আমাদের আন্তর্জাতিক মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। যদিও কারও পক্ষেই আমাদের দেশের পরিস্থিতি বুঝতে পারা সম্ভব নয়।’

সু চি বলেন, ‘আমাদের দেশের শান্তি ও উন্নয়ন আমাদের চেয়ে কেউ বেশি চাইতে পারে না। তাই এসব সমস্যা আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘উন্নতি ও সফলতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা বাস্তবায়ন করে যাব। সমালোচনা ও অভিযোগের জবাব কথায় না দিয়ে আমাদের পদক্ষেপ ও কাজ দিয়ে বিশ্বকে দেখিয়ে দেব।’

রাখাইনে করণীয় বিষয়ে সু চি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে আমাদের অনেক কিছুই করতে হবে। আমরা যদি করণীয় বিষয়গুলোর তালিকা করি ও অগ্রাধিকার ঠিক করি, তাহলে তিনটি প্রধান করণীয় সামনে আসে। তা হলো প্রথমত, বাংলাদেশে যারা চলে গেছে তাদের প্রত্যাবাসন ও কার্যকরভাবে মানবিক সহায়তা দেওয়া। দ্বিতীয়ত, পুনরায় স্থানান্তর ও পুনর্বাসন। তৃতীয়ত, অঞ্চলটির উন্নয়ন ও স্থিতিশীল শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।’

অং সান সু চি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যারা ফিরে যাবে তারাই শুধু নয়, দাইং-নেত ও মিওর মতো ছোট জাতিগোষ্ঠীসহ রাখাইন জাতি ও হিন্দুরাও মিয়ানমারের পুনর্বাসন উদ্যোগের আওতায় থাকবে। তারা যাতে স্বাভাবিকত্ব ফিরে পায়, তা নিশ্চিত করতে আমাদের কাজ করতে হবে। তাদের জীবন উন্নত করতে আমাদের স্থিতিশীল, টেকসই কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে এবং আগামী বছরগুলোয় সংঘাতময় এই অঞ্চলে স্থিতিশীল শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে।’

সু চি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের উন্নয়নের জন্য, সব খাতে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমাদের এমন একটি পদ্ধতির প্রয়োজন, যা কেন্দ্রীয় সরকার, জনগণ, বেসরকারি খাত, স্থানীয় এনজিও, নাগরিক সমাজ, বন্ধুপ্রতিম দেশ, জাতিসংঘের সংস্থা, আইএনজিওগুলোকে সহযোগিতার মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দেবে।’ মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর হিসেবে এই সম্মিলিত উদ্যোগে তিনি সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

সু চি বলেন, ‘আগামী সপ্তাহেই সরকার কর্মসূচিটি শুরু করবে। এতে দেশের সব জনগণ, এনজিও, নাগরিক সমাজ ও ব্যবসায়িক নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। আগামী রোববার (১৫ অক্টোবর) থেকে আমরা আমাদের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনাদের জানিয়ে দেব, কীভাবে আপনারা আমাদের সাহায্য করতে পারবেন, আমাদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করবেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *