ঝিনাইদহে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ :
শহুরে যান্ত্রিক জীবনে কিছুটা আনন্দ যুক্ত করতে ঝিনাইদহে আয়োজন করা হয়েছিল
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। এ আয়োজনকে ঘিরে শহরের পৌরসভা এলাকার
খাজুরা গ্রাম পরিণত হয়েছিল উৎসবের নগরীতে।

যান্ত্রিকতার যাতাকল আর করোনা
অতিমারিতে যেন ভুলতে বসা গ্রামীণ ঐতিহ্য লাঠিখেলার খবরে মঙ্গলবার শহরের খাজুরা
পুর্বপাড়ায় দুপুর থেকেই ভীড় করে অসংখ্য নারী-পুরুষ। শহর ছাড়িয়ে গ্রাম থেকেও
আসতে শুরু করে দর্শকরা।

দুপুরের পর থেকে খেলা শুরু হলেও সুর্য পশ্চিমে হেলে পড়লে যেন
মেতে ওঠে খেলা প্রাঙ্গণের দর্শকরা। শুরুতে ঢাক-ঢোল আর কাসার ঘন্টার সাথে নৃত্য আর
অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শণ করে খেলোয়াড়রা। এর পরই শুরু হয় মুল আকর্ষণ। দুই জন লাঠিয়াল বাদ্যের
তালে তালে ঝাপিয়ে পড়েন একে অন্যের উপর। আত্মরক্ষার পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে কাবু করতে
মেতে ওঠেন তারা। আর তা দেখে উল্লাসে ফেটে পড়েন উপস্থিত দর্শকরা।

শহুরে ব্যস্ত জীবন
আর করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এই আয়োজন। অনেকদিন পর হারানো এই
ঐহিত্য দেখতে পেয়ে খুশি দর্শকরা। আব্দুল কাদের নামের এক দর্শক বলেন, অনেকদিন পর
লাঠিখেলা দেকচি। মাঝে তো করোনা গেল, সবই তো বন্দ ছিলো। মেলাদিন পর এই খেলা
দেখে খুব ভালোই লাগছে। রাশেদ উদ্দিন নামের আরেক দর্শক বলেন, গ্রামবাংলার
ঐতিহ্যবাহী এই লাঠিখেলা দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। মাঝে মাঝে খেলার
আয়োজন করা হয়।

এজন্য বর্তমান প্রজন্ম বিশেষ করে শহরের ছেলেমেয়েরা এ খেলা
সম্পর্কে জানে না। তাই তাদেরকে গ্রামীন ঐতিহ্য জানাতে নিয়মিত এ ধরনের খেলার
আয়োজন করা উচিত। ঝুমুর নামের এক দর্শক বলেন, অনেকদিন পর লাঠিখেলা দেখলাম।
প্রতিনিয়ত যদি এই খেলা আয়োজন করা হয় তাহলে সবাই আনন্দ করে দেখতে পারতাম।
তাই নিয়মিত এ খেলা আয়োজন করার দাবি জানাচ্ছি।

আনোয়ার উদ্দিন নামে এক
খেলোয়াড় বলেন, আমরা লাঠিখেলা করে কোন টাকা-পয়সা পাইনে। খেলা করলি আমাগের
খেলা দেখে মানুষ হাততালি দেয়, আনন্দ পায়, তাই দেকে আমারও আনন্দ লাগে। এই জন্যি
দ্যাশ-বিদ্যাশে খেলা করে বেরাই। সরকার যদি আমাগের দিকি একটু তাকাতো তাইলে
আমাগের পক্ষে এই খেলা ধরে রাখা সম্ভব হতো।

এ ব্যাপারে আয়োজক খাজুরা গ্রামের
সামাদ মল্লিক বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে আর মানুষকে একটু আনন্দ দেওয়ার জন্য
এই আয়োজন করেছি। আগামী প্রজন্ম যেন বাঙালী ঐহিত্য সম্পর্কে ধারণা পায়
এইজন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *