মু্ক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক যেভাবে সাংবাদিক গেদুচাচা হলেন | বাংলারদর্পন

মাসুম বিল্লাহ ভূঁইয়াঃ

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গেদুচাচা খ্যাত সাংবাদিক খোন্দকার মোজাম্মেল হকের জম্ম ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলাধীন গতিয়া পূর্ব সোনাপুর গ্রামের খোন্দকার বাড়িতে। তিনি ১৯৫০ সালের ১৮ ই ফেব্রুয়ারী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জম্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এটিএম খোন্দকার ওবায়দুল হক ছিলেন শিক্ষক। মায়ের নাম সৈয়দা আজিজুন নেছা খানম।

 

ছাত্র জীবন থেকেই তিনি ছিলেন প্রতিবাদী, বিদ্রোহী ও স্বাধীনচেতা। ১৯৬৪ সালের ১১ ই মার্চ ছাত্র গনহত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে ধর্মঘট ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার কর্মসূচি পালনের সময় তিনি ছাগলনাইয়া থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে থানার সামনে পাকিস্তানের  উত্তোলিত জাতীয়  পতাকা ছিড়ে ফেলার অভিযোগে  অন্যান্য সহকর্মীসহ হুলিয়া নিয়ে পালিয়ে বেড়ান।

 

১৯৬৬ সালের ৭ ই জুন তিনি আটক হলেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ফেনী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক,  ১৯৬৭ সালে ফেনী মহকুমা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক ছিলেন।

১৯৬৮ সালে তিনি নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

 

ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলনের সময় খোন্দকার মোজাম্মেল হক এবং শহীদ সৈয়দ মাওলানা ওয়ায়েজ উদ্দিন নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক নির্বাচিত হন। সেই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারি হয়।

 

১৯৬৯ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক জেলা ফেনী স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

 

১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ রেসকোস ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনসভায় খোন্দকার মোজাম্মেল হক স্বশরিরে উপস্থিত ছিলেন। সেই ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষন শুনার পর দিন ৮ ই মার্চ তিনি ফেনীতে আসেন। এসেই ৮ ই মার্চ নিজ হাতে খোন্দকার মোজাম্মেল হক জাতীয় পতাকা তৈরি করেন।

 

পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নোয়খালী জেলার ( গ্রেটার জেলা) সাধারণ সম্পাদক ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ফেনী মহকুমার আহবায়ক হিসেবে ৯ মার্চ ১৯৭১ ফেনীর ট্রাংক রোড়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বিশাল জনসভায় লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন খোন্দকার মোজাম্মেল হক।

 

২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঢাকায় গণহত্যা শুরু করে। ২৭ মার্চ থেকে সারা দেশে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।

 

ফের্নীতে একটি পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্প ছিল, সিও অফিসে তারা ছিল। ২৭ শে মার্চ সেই ক্যাম্প ঘেরাও করেন অস্রহাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মোজাম্মেল হকসহ মুক্তিকামী জনতা। ক্যাম্পের দেওয়াল ফুটো করে মুক্তিকামী জনতার ওপর গুলি ছুড়ে পাকিস্তান হানাদার। এক পর্যায়ে এ দেশীয় পুলিশ ও সাবেক আর্মিদের সহাতায় সবগুলো পাকহানাদারকে খতম করা হয়।তখন প্রাথমিকভাবে ফেনী শত্রু মুক্ত হয়।

 

পরবর্তীতে ফেনীতে যাতে পাক হানাদার বাহিনী ঢুকতে না পারে। মহাসড়কে ব্যারিকেট দিয়ে রাখেন খোন্দকার মোজাম্মেল হক সহ মুক্তিকামী জনতা। ৭১ এ  সহকর্মী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তিনি “মোজাম ভাই ” হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

 

খোন্দকার মোজাম্মেল হক এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ফেনীতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী প্রবেশ করতে পারে নাই। পরবর্তীতে  সেলিং করতে করতে পাকিস্তান সরকার শত্রু সৈন্য নামিয়েছে ফেনী নদী দিয়ে স্পীড বোর্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন গানবোর্ড নিয়ে এসে ফেনীতে অবস্থান নেয়।

 

তারপর (২৪ শে এপ্রিলের পরে ) ক্যাপটেন জাফর ঈমাম ফেনীতে আসেন। তিনি মুন্সির হাট এলাকায় ডিফেন্স গড়ে তোলেন। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর খালেদ মোশারফ। জাফর ঈমাম ছিলেন সাফ সেক্টর কমান্ডার।

পরে খোন্দকার মোজাম্মেল হক সংগঠিতভাবে অস্রহাতে পাক হানাদার বাহিনীর ওপর অস্রহাতে যুদ্ধ করেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি আঘাত করেই পালিয়ে যেতেন। পুনরায় আবার আঘাত করতেন। নির্দেশনাও ছিল এমন। কিন্তু তার কিছু সহকর্মী মুক্তিযুদ্ধা শত্রু সৈন্যকে আঘাত করে পালিয়ে না যাওয়ায় প্রাণ হারান। শহীদ হন।

 

১৯৭১ সালে ৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত হলে বিজয় মিছিলের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ছিলেন। মিছিল শেষে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

ফেনী মুক্ত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া থানার প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক পূনর্বিন্যাস কমিটির আহবায়ক ও নোয়াখালী ১ নির্বাচনি এলাকার বিশেষ রাজনৈতিক সমন্নয়ক এর দায়িত্ব পালন করেন।

 

লেখা লেখি ছিল তাঁর সারাজীবনের অন্যতম অধ্যায়। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি সাপ্তাহিক সুগন্ধা, আজকের সূর্যোদয়, দৈনিক আজকের ঢাকা, দৈনিক পূর্ব আলোর প্রধান সম্পাদক ছিলেন।

 

সাংবাদিকতায় ভিন্ন ধারার কিংবদন্তি গেদুচাচা ও আশির দশকের শেষ প্রান্ত। এরশাদের সামরিক শাসনামলের শ্বাসরুদ্ধকর প্রেক্ষাপট। গণমাধ্যমে তখন এরশাদের বিরুদ্ধে বলা বা সমালোচনা করা খুবই কঠিন। কথা বলতে হতো খুবই কৌশলে। বিরোধী দলের আন্দোলনে রাজপথ উত্তপ্ত।

 

বিবিসির আতাউস সামাদ, ভয়েস অব আমেরিকার গিয়াস কামাল চৌধুরী, যায় যায় দিনের শফিক রেহমান, বিচিন্তার মিনার মাহমুদ, মতিউর রহমান চৌধুরীসহ বড় বড় সাংবাদিকেরা অনেকেই ষড়যন্ত্রের শিকার।

 

অথচ ঠিক এরকম উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ১৯৮৮ সালের ১ জুন হঠাৎ অভিনব নতুন ধারায় সাংবাদিকতার সূচনা করেন খোন্দকার মোজাম্মেল হক। সাপ্তাহিক সুগন্ধা পত্রিকার দায়িত্ব নিয়ে শুরু করলেন ইতিবাচক সমালোচনা। অর্থাৎ সবকিছু বলবেন, তবে একটু অন্যভাবে। এই যেমন- তার বিখ্যাত কলাম ‘গেদু চাচার কলাম’।

 

‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট, এরশাদ চাচা। আমার ছালাম গ্রহণ করবেন। আশা করি ছহি-ছালামতে আছেন। আমিও মোটামোটি। চাচাগো, আমাকে আপনার না চেনারই কথা। ৬৮ হাজার গ্রামের কোটি মানুষের মধ্যে আমি একজন অধম নাখান্দা নালায়েক। থাকি অজোপাড়া গাঁয়ে। সকলে আমারে গেদুচাচা বলিয়া ডাকে। পুতে ডাকে চাচা। আবার বাপেও আমাকে কহে চাচা। মানে আমি সকলের চাচা। আপনিও আমাকে চাচা বলিতে পারেন।’

 

প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায় সারা দেশে। সামরিক শাসক ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপাতি এরশাদের সাথে মশকরা! তাও আবার পত্রিকায় প্রকাশিত খোলা চিঠিতে- হাস্যরসের মাধমে! সহজ সরল গ্রাম্য ভাষায় মানুষের সমস্যা উপস্থাপন করতে পারতেন তিনি। রাষ্ট্র ও সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নীতির দূর্বলতাগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো ছিল তার অন্যতম উদ্দেশ্য। ভিন্ন ধারার এই সাংবাদিকতা পথিকৃত খ.ম.হ।

 

৯০’র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরশাদের পতনের পর দায়িত্ব নিলেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। এবার তার কলামেও পরিবর্তন আসলো। গেদুচাচা তাকে ‘কডু চাচা’ সম্বোধনের মাধ্যমে হাস্যরসের জন্ম দেন। ‘কডু মিয়া’ ডাক নামটি সম্পর্কে বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের পরিবারের সদস্যদেরাও হয়তো জানতেন না।

 

পরবর্তীতে ১৯৯১ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত কখনো  মাননীয় হাসিনা বিবি, কখনো মাননীয় খালেদা বিবি সম্মোধন করে লিখতেন ভিন্ন রস এনে লিখতেন নিত্য নতুন গেদুচাচার খোলা চিঠি।

 

আজকের সূর্যোদয় গ্রুপের কার্যালয় তৎকালে সর্বদা থাকতো জমজমাট। পত্রিকার কার্যালয়ে থাকতো সিনিয়র, জুনিয়র সাংবাদিকদের মিলন মেলা। আবদুল গাফফার চৌধুরী, এবিএম মুসা, মতিউর রহমান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান মিলন, হেদায়েত হোসাইন মোরশেদ, নাজিম উদ্দিন মোস্তান, শাহজাহান সরদার, আবু তাহের, নঈম নিজাম, স্বপন দাশ গুপ্ত প্রমূখরা আজকের সূর্যোদয়ে কলাম লিখতেন।

 

ফারজানা মোজাম্মেল হক ছিলেন আজকের সূর্যোদয়ের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। ১৯৯০ এর শুরু থেকে তিনি নিজের নামে আজকের সূর্যোদয় পত্রিকা অনুমোদন নেন। প্রথম থেকেই পত্রিকাটি জনপ্রিয়তা পায়।

 

তখন নিউজ ডেস্কে ছিলাম রানা আশরাফ, মাহফুজুর রহমান, ইকবাল হোসেন সানু, আজমল হক হেলাল, শামীম মোহাম্মদ, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, হালিম সিদ্দিকী, আহমেদ উল্লাহ ভূঁইয়া সহ আমরা বেশ ক’জন।

 

তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে শাবান মাহমুদ, চট্টগ্রাম ব্যুরোতে জুবায়ের সিদ্দিকী, সোহেল  হায়দার চৌধুরী, সিলেটে লতিফ নতুন, কুমিল্লায় ফিরোজ মিয়া নতুনসহ দেশে বিদেশে আরো অসংখ্যা সংবাদ কর্মী। জেনারেল ডেস্কে খোন্দকার বেলায়েত হোসেন, অহিদুজ্জামান হিরু, ইউসুফ আলী, খায়রুল আলম ও জহিরুল ইসলাম প্রমূখ।

 

খোন্দকার মোজাম্মেল হক ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে ডেইলি নিউজ ইউনিয়নের চীফ ছিলেন। বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সদস্য, মানবাধিকার সাংবাদিক গ্রুপের মহাসচিব।

 

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে  স্বাধীনতা পরবর্তীতে ৬৮ হাজার গ্রাম বাংলার প্রতিনিধি হয়ে লেখনি মাধ্যমে তথা কলমের খোঁজা মেরে বিশেষ করে গেদুচাচার খোলা চিঠি, সিদ্ধিবাবার উপলব্ধি, সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ ইত্যাদি শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখে রাষ্ট্র নায়কদের বুদ্ধি দিয়ে সুপরামর্শ দিয়ে, ভূল শুধরিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের  সার্বিক উন্নয়ন আজীবন ভূমিকা রেখে গেছেন বিশ্ব বরন্য গেদুচাচা খ্যাত সাংবাদিক খোন্দকার মোজাম্মেল হক। সত্যের পথের এই কলম যোদ্ধার কাছে ছিল সবার ওপরে বাংলাদেশ।

 

আজকের সূর্যোদয় নিয়মিত প্রকাশনার ৩০ বছরে ২০৯২ টি চিঠি লেখেছিলেন। সিদ্ধি বাবার উপলব্ধি শিরোনামের কলামের মতিয়ার রহমান তাঁরই ছদ্মনাম।

 

আজকের সূর্যোদয়ের ধারাবাহিক উপন্যাস ” স্বর্গ নরক” এর লেখক সুমন চৌধুরী গেদুচাচারই আরেকটি ছদ্মনাম। তিনি সুংসবাদ দুঃসংবাদ শিরোনামের নিয়মিত কলামিস্ট। কোটি পাঠকের পরিচিত নাম গেদুচাচা ।

 

শুধু বাংলাদেশে নয় আজকের সূর্যোদয় পত্রিকাটি  আমেরিকা,কানাডা, অস্টেলিয়া,ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশসমহ, আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিয়মিত প্রকাশিত হতো।

 

শিক্ষা জীবনে খোন্দকার মোজাম্মেল হক স্নাতক ডিগ্রি ছাড়াও আইন ও সাংবাদিকতা বিষয়ের ডিগ্রি লাভ করেন।

 

১৯৯১ সালে তিনি আজকের সূর্যোদয় গ্রুপ পাবলিকিসন্স প্রতিষ্ঠা করেন। এ গ্রুপ থেকে তিনি আজকের ঢাকা, আপনজন, সোনার তরী, সোসাইটি প্রকাশিত হচ্ছে।

 

এ ছাড়াও তিনি উল্টোস্রোত নামক এনজিও বিষষয়ক মাসিকেরও সম্পাদনা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি রেডক্রিসেন্ট, বাংলাদেশ লায়ন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ব্লাড ব্যাংক ঢাকা, ফেনী ডায়বেটিক সমিতি, ম্যাপ বাংলাদেশ এর আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি গতিয়া আজিজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

 

ইতিমধ্যে তাঁর লেখা কাব্যগ্রন্থ নগ্ননারী বিসার্প বোমারু বিমান এবং গেদুচার খোলা চিঠি নামে একটি কলাম সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক “তোমার সংগে যাবো”  ১৯৯৬ সালে “আরেক একাত্তর ” নামে তাঁর লেখা দুটো উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর আরেকটি প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ” রক্তাক্ত স্মৃতি ১৯৭১।

 

খোন্দকার মোজাম্মেল হক সাউথ এশিয়ান সোসাইটি, ইউনেস্কো, রিসার্চ রাইট ফোরাম, হিউম্যান রাইট ফোরাম ও অল ইন্ডিয়া মিডিয়া নিউজ পেপার ফেডারেশন থেকে একাধিক পুরস্কার লাভ করেন।

 

একজন সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসেবে দেশে ও বিশ্ব পরিমন্ডলে একাধিক পুরস্কার প্রাপ্ত কিংবদন্তি ফেনীরই কৃতি সন্তান

 

সমাজ সেবক হিসেবে তিনি বহু সংগঠের সাথে জড়িত। তিনি লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ৩১৫ বি ২ এর রিজিয়ন চেয়ারম্যান। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ ফাউন্ডিং ফোরামের চেয়ারম্যান, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি সমাজের মানুষের কিছু করা, মানুষের উপকার করা তাঁর আরেকটি নেশা ছিল।

 

তিনি একবার ফেনী ১ আসনের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট মনোনয়ন চেয়েছিলেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা খোন্দকার মোজাম্মেল হককে পরের বার বিবেচনা করবে বলে সান্ত্বনা দেন। কিন্তু পরে আর তিনি প্রার্থী হন নাই।

 

পারিবারিক জীবনে তিনিসহ ৩ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে সবার বড় ভাই ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পূর্বে ১৫ বছর  বয়সেই তিনি পিতাকে হারান। তাঁর মা এবং পরিবারের বড় ভাই হিসেবে তিনি পরিবারের হাল ধরেছিলেন।

 

বিবাহীত জীবনে তিনি ১৯৭৮ সালের ৩০ নবেম্ভর ছাগলনাইয়া উপজেলা মাটিয়া গোধা এম এ রউপের প্রথম কন্যা ফারজানা নুর নাহার লাকির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ পুত্র ও ২ কন্যার জনক।

ধর্মীয় জীবনে তিনি ৩ বার হজ্ব পালন করেছিলেন।

 

২০২০ সালের ২৮ জুন শনিবার গেদুচাচা ঢাকার সেগুনবাগিচা নিজ বাসায় ডায়াবেটিস জনিত কারনে শারিরীক অসুস্থতা দেখা দিলে ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন।  ঐ দিনই সন্ধায় তাঁর শাসকষ্ঠ দেখা দিলে ঢাকা উত্তর বাড্ডা এএমজেট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

 

২০২০ সালের ২৯ জুন রবিবার বিকেল ৪ টায় ঢাকার এএম জেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে এই কিংবদন্তি খোন্দকার মোজাম্মেল হক চির বিদায় নিলেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)

মৃত্যু কালে তিনি স্ত্রীসহ ৩ পুত্র, ২ মেয়ে, ২ ভাই, ৫ বোন সহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান

 

এই জাতীয় বীর সন্তান ও গেদুচাচা খ্যাত বিশিষ্ট সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা  খোন্দকার মোজাম্মেল হকের মৃত্যুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মাননীয় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য  তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস, সুপ্রিম কোর্ট বারের আমিন উদ্দিন মানিক,

 

 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র আজম নাসির উদ্দিন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল আলম চৌধুরী নওফেল, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের অভিবাবক আলা উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, ফেনী ২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি, ফেনী ২ আসনের সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীন হাজারী, ফেনী ১ আসনের এমপি শিরীন আখতার এমপি, ফেনী ৩ আসনের এমপি মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী,

 

ফেনী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহানারা বেগম সুরমা, সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনি, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, ছাগলনাইয়া পৌর মেয়র মোঃ মোস্তফা, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ফেনী জেলা শাখার সভাপতি এমরান পাটোয়ারী, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ফেনী প্রেস ক্লাব, সোনাগাজী প্রেসক্লাব, ছাগলনাইয়া প্রেস ক্লাব  গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

 

২০২০ সালে ৩০ জুন সকাল ৯ টায় ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রথম নামাজে জানাজা ও ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা পূর্ব  সোনাপুর নিজ গ্রামের বাড়ির সামনে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে গার্ড অব অনার প্রদান পূর্বক রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানের  দাফন করা হয়। বাংলারদর্পন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *