রাজনীতির মরা গাঙে জোয়ার আনতে পারে ডাকসু নির্বাচন ?

নিউজ ডেস্কঃ

বাংলাদেশের নিস্তরঙ্গ রাজনীতিতে যখন কোন ইস্যু নেই, বিরোধী দলগুলো নিজেদের অস্তিত্বে লড়াইয়ে লিপ্ত, সাংগঠনিক দুর্বলতা, হতাশা, কোন্দলে জর্জরিত ঠিক সেসময়ে ডাকসু নির্বাচন কি তাদের মরা গাঙে জোয়ার আনলো? ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পর থেকে দেশে দৃশ্যত কোন রাজনীতি নেই, রাজনীতিবিদদের হাতে কোন কর্মসূচি নেই। খোদ সরকারী দলের মধ্যেও কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। সরকারী দল ব্যস্ত উপজেলা নির্বাচন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি দমন, নদীরক্ষাসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে।

 

নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিরোধী দলগুলো কার্যত হতাশ। নিজেদের মধ্যে কোন্দলে জর্জরিত। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে অন্তর্কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। তাদের কোন কর্মসূচি নেই। শুধুমাত্র বক্তব্য-বিবৃতি, গোলটেবিল বৈঠকের মধ্যে বিএনপি নেতারা তাদের কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রেখেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের উত্থাপিত অভিযোগের কোন তথ্য প্রমাণ তারা হাজির করতে পারছে না। নির্বাচন নিয়ে ট্রাইব্যুনালে তারা মামলা করলেও সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে কোন উৎসাহ উদ্দীপনা বা আগ্রহ দেখা যায়নি। এমন কোন শক্তি বা সাংগঠনিক সক্ষমতা তাদের নেই। এমনকি তাদের দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলখানায় বন্দী থাকলেও তার মুক্তি ব্যাপারে তারা কার্যকর কোন কর্মসূচি দিতে পারেনি। অন্য বিরোধী দলগুলোর অবস্থা আরও তথৈবচ। এর মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একজন সাংসদ ইতিমধ্যে সংসদে যোগ দিয়েছেন। বাকি দলগুলোর কোন কার্যক্রমই নেই। শুধুমাত্র মাঝেমধ্যে চা নাস্তা খাওয়ার জন্য তারা একত্র হয়ে থাকেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন ১৪ দলের শরীকদের মধ্যে হাহাকার বিরাজ করছে। তারা নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত। তারা সরকারী দলে নাকি বিরোধী দলে সেটা নিয়েই তাদের এখন লিটমাস পরীক্ষা চলছে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে কি ডাকসু নির্বাচন রাজনীতির মাঠে একটি নতুন ইস্যু তৈরি করে দিলো?

প্রথমত, ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মতো নয়। জাতীয় নির্বাচনে লাখ লাখ ভোটার থাকলেও ডাকসু নির্বাচনে ভোটার মাত্র ৪৩ হাজার। দেশের সেরা শিক্ষার্থীদের বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কুয়েত মৈত্রী হলের ঘটনাই ডাকসু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যথেষ্ঠ। এর ফলে সারাদেশের মানুষের মধ্যে এই মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে, যে সরকার ডাকসু নির্বাচনেও কারচুপি করে সে সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়? এটা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, অসন্তোষ, অনীহা দানা বাঁধবে।

দ্বিতীয়ত, ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকারের বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো একাট্টা হয়ে গেলো। ছাত্রদল এবং কোটা সংস্কার আন্দোলন- এগুলো সব আলাদা আলাদা হয়ে ছিল। বাম প্রগতিশীল দলগুলো সবসময় ছাত্রদলের সঙ্গে একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলতো। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলোর ব্যাপারে প্রশাসন যখন ঠিকঠাকভাবে জবাব দিতে পারলো না, তখন এরা একসঙ্গে নির্বাচন বর্জন করলো এবং একসঙ্গে কর্মসূচি ঘোষণা করছে। তাহলে এই নির্বাচন কি ছাত্রআন্দোলনের একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরি করলো না সরকারের বিরুদ্ধে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই সরকারবিরোধী আন্দোলন বা যেকোনো আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনই যেকোনো সরকারের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন এখানে ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে যে প্লাটফর্ম তৈরি হলো সেটা কি সরকারকে কোনো অস্বস্তিতে ফেলবে?

তৃতীয়ত, বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদলের অস্তিত্ব বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে তারা প্রচারণার সুযোগ পেল এবং ডাকসু নির্বাচন বর্জন করে তারা অন্য সংগঠনগুলোর মধ্যে অনেকটা মিশে গেল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এর মাধ্যমে তারা ক্যাম্পাসে সুসংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেল? এই সংগঠিত হওয়ার ফলে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি কি বাড়তে যাচ্ছে? কারণ যেকোনো সংগঠনের ছাত্রসংগঠন তাদের নতুন রক্ত সঞ্চালন করে। সংগঠনকে গতিশীল এবং শক্তিশালী করে তুলতে ছাত্র সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেক্ষেত্রে ডাকসুর আজকের ঘটনাটি বিএনপিকেও আবার নতুন জীবন দেবে কিনা, সেটা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে।

চতুর্থত, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের নিরুপদ্রব শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ক্ষুণ্ন হবে কিনা, ডাকসু নির্বাচন বাতিল বা বর্জনের আন্দোলন কি শেষ পর্যন্ত পরিবেশকে সহিংস এবং হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলন হবে কি না তা নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

অনেকেই মনে করছেন যে, ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সরকারের সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অতি উৎসাহী গোষ্ঠী এই নির্বাচনের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলোকে সংগঠিত এবং তাদের নতুন প্রাণ সঞ্চারণের সুযোগ করে দিলো কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *