বার্ধক্যজনিত রোগ ও অবসরের ঘোষণা দিয়ে প্যারোলে মুক্তি চাইবেন খালেদা !

নিউজ ডেস্কঃ

দীর্ঘ প্রায় ২ মাস পর আগামী শুক্রবার বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের সাক্ষাৎ হতে পারে বলে জানা গেছে। কারা সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তার পরিবারকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। আগামী শুক্রবার খালেদা জিয়া ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, বোন ও নিকট আত্মীয় স্বজনরা দেখা করবেন। তবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এটা শুধুমাত্র সাক্ষাৎ হবে না, খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্যই এই সাক্ষাৎটি হচ্ছে। সাক্ষাতে খালেদা জিয়াকে সব ধরনের রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণার অনুরোধ জানাবেন তার ছোট ভাই।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে প্যারোল দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান যে শর্ত সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে তা হলো-রাজনীতি থেকে খালেদার অবসরের ঘোষণা। প্যারোলের কোন বিষয় বিবেচনার আগেই আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা চাইছেন সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ, যাদের সঙ্গে শামীম ইস্কান্দার খালেদার প্যারোলের ব্যাপারে যোগাযোগ করছেন।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তারেক জিয়ার পাওয়া প্যারোলে শর্ত ছিলো রাজনীতি থেকে অবসর। প্যারোল পেয়ে লন্ডনে যাওয়ার পথেই তিনি বিমানবন্দরে রাজনীতি থেকে অবসর এবং অব্যাহতির একটি চিঠি স্বাক্ষর করে গিয়েছিলেন। যদিও তিনি তা প্রতিপালন করেননি।

তবে এখন যে প্যারোলের বিষয় নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার আত্মীয় স্বজনরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে তার অন্যতম বিষয় হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন, বিএনপির সব ধরনের পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করবেন। এমনকি প্রাথমিক কোন পদেও তিনি থাকতে পারবেন না। জানা গেছে যে, শামীম ইস্কান্দার এই শর্তে রাজি হয়েছেন। তবে বেগম খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে কী প্রতিক্রিয়া জানাবেন তা এখনও অনিশ্চিত। যদিও খালেদা জিয়ার আত্মীয় স্বজনরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে কোনো ভাবে হোক খালেদা জিয়াকে রাজি করাতে হবে।

শামীম ইস্কান্দার তার ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার যে বয়স ও শারীরিক অবস্থা তাতে তাকে কোনভাবেই বেশি দিন জেলে রাখা যায় না। সফলভাবে রাজনীতির করার বয়সও এখন আর তার নেই। এ অবস্থায় এক ধরনের অবসর জীবন যাপন করাই উচিৎ এবং সেটা বাইরে যদি হয় সেটাই মঙ্গল। জেলের ভিতর কষ্ট করা অর্থহীন। খালেদা জিয়ার অবসর গ্রহণের জন্য শামীম ইস্কান্দার নানা রকম যুক্তি তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।

আইনজ্ঞরা বলছেন, প্যারোল আবেদন দুইভাবে করা যেতে পারে। একটা হলো, বেগম খালেদা জিয়ার স্বজনরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারেন। যদি স্বাস্থ্যগত কারণে এ আবেদন করা হয় তাহলে মন্ত্রণালয়ে সেটা বিবেচনা করবে এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক যদি মতামত দেন তার সুচিকিৎসার জন্য তার প্যারোল প্রয়োজন এবং তাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য দেশী বা বিদেশী কোন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হবে তাহলে সরকার সে মোতাবেক তার প্যারোলের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবে

 

। আবার আদালতের মাধ্যমেও প্যারোলের আবেদন হতে পারে। খালেদা জিয়ার স্বজনরা আদালতে খালেদা জিয়ার প্যারোলের আবেদন করতে পারেন। সেখানে যদি সরকার আপত্তি না জানায় এবং আদালত যদি বিবেচনা করে দেখে প্যারোল দেয়ার মতো যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে, তাহালে আদালত প্যারোল মঞ্জুর করতে পারে।

খালেদার স্বজনরা কোন পদ্ধতিতে আবেদন করবেন তা নিশ্চিত নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, আদালতের মাধ্যমে আবেদনে তারা আগ্রহী নন। কারণ এ মাধ্যমে প্যারোলের ব্যাপারটি অনিশ্চিত এবং এর আগেও দুইবার তারা এই চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।

 

দেখা যায় উচ্চ আদালতেও খালেদার জামিনের বিষয়গুলো ঝুলে থাকে। এজন্য খালেদার স্বজনরা সরাসরি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন এবং তারা তিনটি বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে। এগুলো হলো, খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করবেন, তিনি কোন রাজনৈতিক বক্তব্য বিবৃতি দেবেন না বা রাজনৈতিক বিষয়ে কোন কথাবার্তা বলবেন না এবং তিনি দেশে অবস্থান করবেন না।

তবে শেষ পর্যন্ত এই প্যারোলের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নির্ভর করবে বেগম খালেদা জিয়ার মতামতের উপর। বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়ার স্বজনরা তার প্যারোল চাইলেও তিনি নিজেই সেখান থেকে সরে এসেছিলেন। এবারও তিনি রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে প্যারোলে যাবেন কি না বিএনপির অনেকের সংশয় রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *