অচল হয়ে গেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি | বাংলারদর্পন 

নিউজ ডেস্ক: দলীয় নেতাদের সমন্বয়হীনতা, নেতৃত্বের প্রশ্নে অনৈক্য ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কোন্দলসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত বিএনপির স্থায়ী কমিটি অচল হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে সক্রিয় আছেন মাত্র ৯ জন। ফলে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এমন স্থবিরতাকে দলীয় অধঃপতনের বড় কারণ হিসেবে দেখছে খোদ বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

এদিকে বিএনপির সর্বোচ্চ এই নীতি নির্ধারণী সংস্থার বৈঠক না হওয়ায় সিদ্ধান্তগুলো গঠনতন্ত্র সম্মত হচ্ছে কিনা সে প্রশ্নও উঠেছে বিএনপির অভ্যন্তরে। সামনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না যাওয়া কিংবা আন্দোলনের ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। কিন্তু মাত্র ৯ জন সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবেন কীভাবে-সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

প্রসঙ্গত, দুটি সদস্য পদ পরে ঘোষণা করা হবে জানিয়ে ২০১৬ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে ১৯ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। কিন্তু রাজনীতির মাঠে সেই ১৯ সদস্যের মধ্যে অনেকেই ধরাশায়ী। আবার কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন অনেকেই। ফলে নামমাত্র টিকে আছে স্থায়ী কমিটি। তাহলে কি বিএনপি বুড়ো-মৃত্যু পথযাত্রীদের দলে পরিণত হয়েছে!

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির এক নম্বর সদস্য ছিলেন বেগম জিয়া। তিনি এখন কারান্তরীণ। তাই স্থায়ী কমিটিতে তাঁর অংশগ্রহণ সম্ভব না। কমিটির দুই নম্বর সদস্য তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকেই দেশে নেই। কাজেই আনুষ্ঠানিক বৈঠকে তিনিও অনুপস্থিত। কমিটির ৬ নম্বর সদস্য তরিকুল ইসলাম এখন মৃত্যুশয্যায়। গত তিন মাসে দলীয় কর্মকাণ্ডে তিনি অনুপস্থিত। কমিটির ৮ নম্বর সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হান্নান শাহ মারা গেছেন অনেক দিন। তাঁর শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব হয়নি। একই অবস্থা ৯ নম্বর সদস্যের ক্ষেত্রেও। এম. কে. আনোয়ার মারা যাওয়ার পর ওই শূন্য আসনও পূরণ করা হয়নি। ১০ নম্বর সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াও দীর্ঘদিন অসুস্থ। তিনিও দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন না। স্থায়ী কমিটির ১১ নম্বর সদস্য মির্জা আব্বাস সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুরে গেছেন। এখন তিনিও অনুপস্থিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। ১৭ ও ১৮ নম্বর সদস্যপদ কখনোই পূরণ করা হয়নি। এমনকি বিএনপির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে পরে ঘোষণা করা হবে। আর ১৯ নম্বর সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ গত পাঁচ বছর ধরেই ভারতে।

স্থায়ী কমিটিতে এখন পর্যন্ত সুস্থ সবল আছেন মাত্র ৯ জন। এরা হলেন- ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব:) মাহাবুবুর রহমান, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বিএনপির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, যারা মারা গেছেন তাদের নামও তখন স্থায়ী কমিটির তালিকায় রয়ে গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ, এটাতো বিএনপিই বলছে। বিএনপি তারেক জিয়াকেও অসুস্থ বলে। বিএনপির বক্তব্য অনুযায়ী চিকিৎসার জন্যই তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। বিএনপির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী স্থায়ী কমিটিতে ৫ জন অসুস্থ। অসুস্থতাজনিত কারণে তারা স্থায়ী কমিটির সভায় অনুপস্থিত থাকেন। ২জন মৃত ব্যক্তিও আছেন স্থায়ী কমিটিতে এখনো। একজন বিদেশে আটক। দুইটা পদ কখনো পূরণ হয়নি।

সর্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি নিয়ে দলের একজন নেতা হতাশার সুরে বলেন, মৃত এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের নিয়েই এখন বিএনপির স্থায়ী কমিটি। এই কমিটি তো নিজেরাই বসতে পারে না, আন্দোলন করবে কীভাবে? সংখ্যাগরিষ্ঠ স্থায়ী কমিটির সদস্যরাই যেখানে অনুপস্থিত সেখানে এই স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের বৈধতাই বা কতটুকু? এসব জ্বরাজীর্ণ পরিস্থিতিতে নিয়ে আর যাই হোক দল চলে না। বিএনপির দিকে তাকালে তা এখন অকপটে উপলব্ধি করা যায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *