বাগেরহাট: বাগেরহাটের ফকিরহাটে ফাতেমা জাতের প্রতি কেজি ধান বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ টাকায়। তারপরও কৃষকরা ছুটে আসছেন এ ধান সংগ্রহে। শুধু ফকিরহাট নয় দেশব্যাপী এ ধানের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।
জেলার ফকিরহাট উপজেলার মাশকাটা গ্রামের নারী ফাতেমা বেগমের ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা ৩টি ধানের ছড়ায় উৎপাদিত হয়। এ কারণেই এ ধানের জাত ফাতেমা নামে কৃষকের মুখে মুখে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এ ধান ক্রয় করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগও এ নিয়ে গবেষণায় রয়েছে।
এ ধান সম্পর্কে ফাতেমা বেগম বলেন, ২০১৫ সালে বাড়ির পাশের ধান ক্ষেতে আমার ছেলে লেবুয়াত হাইব্রিড আফতাব-৫ ধান চাষ করে। সেখানে ওই ধানের মধ্যে ব্যতিক্রম ৩টি ধানের ছড়া (শীষ) দেখতে পাই। ওই ছড়াগুলো সংগ্রহ করে আমার ছেলেকে বলি এ ধানগুলো বীজ হিসেবে ব্যবহার কর। সে প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও মায়ের কথা রেখে পরের বছর জমিতে বীজ হিসেবে রোপণ করে। ওই বছর ৩ ছড়া ধানের বীজে প্রায় আড়াই কেজি ধান উৎপাদন হয়।
ফাতেমা আরও বলেন, পরে কৃষি বিভাগের লোকেরা খবর পেয়ে আমাদের ধান দেখতে আসেন। ধানের আকার ও ছড়ায় ধানের পরিমাণ বেশি দেখে তারা আমাকে এ ধান সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেন। পরে আমি এই আড়াই কেজি ধানও বীজ হিসেবে ব্যবহার করি। এরপর এ বছর ৭৫ শতাংশ জমিতে ওই ধান রোপণ করি এতে প্রায় ১১০ মণ ধান হয়।
এ খবর স্থানীয় কৃষকরা জানার পরে ধান সংগ্রহের জন্য সবাই আমার বাড়িতে আসতে থাকে। আমার ছেলে এ ধান বর্তমানে প্রতি কেজি ৪শ’ টাকায় বিক্রি করছে। তারপরও আমরা চাহিদামত ধান দিতে পারছি না।
ফাতেমার ছেলে লেবুয়াত জানান, মায়ের কথা শুনে ধান লাগাই। পরে ধানগুলো বড় হলে একটু আলাদা রকম দেখতে পাই। ধানের পাতাগুলো বেশি চ্যাপটা এবং ধানের মোচাগুলো বের হচ্ছিল কলার মোচার মত। পরে খুশি লাগলে ধানগুলোর একটু বেশি যত্ন শুরু করি। এরপর থেকেই আমাদের এ সফলতা। আমি চাই এ ধানের জাত সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক। আশপাশের কৃষকরা আমাদের কাছ থেকে বীজ হিসেবে এ ধান সংগ্রহ করছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোলায়মান আলী বলেন, যখন ব্যতিক্রম এ ধানগুলি দেখতে পাই তখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করি। তারা এ ধান সংগ্রহ করে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠান। এ ধান নিয়ে এখন গবেষণা চলছে। আমি মনে করি এ ধানই হবে বাংলাদেশের সেরা জাতের ধান। যা আমাদের দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হবে।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন জানান, উপ-সহকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে এ ধানের সম্পর্কে জানতে পেরে গবেষণা শুরু করা হয়। ধানগুলো দেখতে সাধারণ ধানের চেয়ে কিছুটা বড়। ধানের একটি পাতা প্রায় দেড় ইঞ্চি চওড়া, গাছগুলো ১৩৫ সেন্টিমিটার লম্বা। প্রতিটি ছড়ায় গড়ে ৯৪০টি ধানের দানা উৎপাদন হয়েছে। যা সাধারণ ধানের ছড়ার থেকে ৫ গুণ বেশি। আমরা এ বছর নমুনা সংগ্রহের জন্য ধান কেটেছিলাম। সে অনুযায়ী একরে ১৩০ মণ ফলন হয়েছে। ওই এলাকার মাটি লবণাক্ত এবং ঘেরের মধ্যে ধানটি চাষ করা হয়েছে। এ কারণে ধানটি প্রাথমিক পর্যায়ে লবণ সহিষ্ণু হিসেবে বিবেচনা করছি।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত এ ধানের জাত সম্পর্কে জানা যায়নি। যেহেতু ধানটি ফাতেমা পেয়েছে এবং ফাতেমার ছেলে চাষ করেছে। সে কারণে আমরা এ ধানকে ফাতেমা ধান নাম দিতে চাচ্ছি। বর্তমানে এ ধানের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিলেট ও রাজশাহী থেকে আমাদের কাছে এ ধান বীজ হিসেবে সংগ্রহ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এর আগে বেগুনি ধান দিয়ে ব্যাপক অালোচনায় অাসেন গাইবান্ধার দুলালী সুন্দরি।