ভারতীয় মাফিয়া ডন দাউদের পথেই হাঁটছে তারেক | বাংলারদর্পন  

নিজস্ব প্রতিবেদক :

লন্ডনে তারেক জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে যুক্তরাজ্যের হোম ডিপার্টমেন্ট। গতকাল এবং আজ দু-দফায় তাঁর বাসভবনে হোম ডিপার্টমেন্টের লোকজন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ বাতিল করার এটা প্রথম পদক্ষেপ। এই জিজ্ঞাসাবাদে মূলত তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো সম্পর্কে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণকারীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য না হলে তাঁর প্রত্যার্পণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।

তবে যুক্তরাজ্যে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তারেক জিয়া রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে আবেদন করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্রিটেনে অবস্থিত দূতাবাসে গতকাল ২৭ এপ্রিল এই আবেদন পাঠানো হয়েছে। তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, সে লন্ডনেই থাকতে চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি তাঁকে যুক্তরাজ্য ছাড়তে হয় সেক্ষেত্রে তারেক বাংলাদেশে ফিরে যেতে রাজি নয়। যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিলের আগেই যদি তাঁর সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর হয়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সরকার তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারবে না। হোম ডিপার্টমেন্ট মূলত: ৫টি অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রথমত: বাংলাদেশ সরকার তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত চেয়েছে। বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ করেছে, যুক্তরাজ্যে বসে তারেক জিয়া বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে। নান রকম সন্ত্রাসে উস্কানি দিচ্ছে। তাছাড়া তারেক জিয়া ১৭ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত। তাঁকে দেশে ফেরত নেওয়া না হলে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

দ্বিতীয়ত; যুক্তরাজ্যের অনেক নাগরিক এবং কয়েকজন ব্রিটিশ এমপি অভিযোগ করেছেন যে, লন্ডনে বসে তারেক জিয়া যে সব শর্তে তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল সেই সব শর্ত ভঙ্গ করছে। রাজনৈতিক আশ্রয়ের অন্যতম শর্তই হলো যুক্তরাজ্য বসে রাজনীতির নামে বিদ্বেষ ছড়ানো যাবে না।

তৃতীয়ত; তারেক জিয়া দীর্ঘ ১০ বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও তাঁর কোনো বৈধ আয় নেই। জ্ঞাত আয়ের বহির্ভূত অর্থ তাঁর কোত্থেকে আসছে, তা নিশ্চিত না হয়ে তাঁকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় দেওয়া বিপজ্জনক।

চতুর্থত; তারেক জিয়ার সঙ্গে ব্রিটিশ সন্দেহভাজন জঙ্গি ও সন্ত্রাসীর রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড সন্দেহভাজন একাধিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তারেকের যোগাযোগের খবর পেয়েছে।

পঞ্চমত; তারেক একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত এবং তাঁকে অপসারণের জন্য ষড়যন্ত্র করছে। যুক্তরাজ্যে তাঁর এ রকম কর্মকাণ্ডের বেশ কিছু আলামত হোম ডিপার্টমেন্টকে দেওয়া হয়েছে।

তবে অভিযোগ যতই গুরুতর হোক, যুক্তরাজ্য থেকে তারেক জিয়াকে বহিষ্কার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। এই প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগবে সে সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত করে বলা যায় না। অবশ্য, যুক্তরাজ্য হোম ডিপার্টমেন্টের একটি সূত্র বলছে, উত্থাপিত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হলেই তারেক জিয়াকে ‘সীমাবদ্ধ চলাফেরা’র আওতায় আনা হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার তারেক জিয়াকে ফিরিয়ে দিতে অব্যাহত চাপ রাখার এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারে। অবশ্য তারেক জিয়ার মতই মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেছিল। কিন্তু ভারতের অব্যাহত চাপে দাউদকে এরকম প্রত্যার্পন প্রক্রিয়া শুরু করলে দাউদ সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। ওই আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় দাউদকে যুক্তরাজ্য ভারতে ফেরাতে পারেনি। তারেক জিয়াও সম্ভবত দাউদের পথেই হাঁটছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *