কোটা সংস্কার আন্দোলন দখলে আনতে গিয়ে যেভাবে বেকায়দায় বিএনপি!

নিউজ ডেস্ক: সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ যখন উত্তাল, ঠিক তখন এই আন্দোলনকে আয়ত্তে আনবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় বিএনপি। এই প্রচেষ্টারই অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর মামুন আহমেদকে। সম্প্রতি তারেক রহমানের সাথে কথিত এই শিক্ষকের ফোনালাপ ফাঁস হলে থলের বেড়াল বের হয়ে আসতে শুরু করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটা সংস্কারের আন্দোলন নিজেদের অনুকূলে আনবার জন্য লন্ডন থেকে তারেক রহমান ফোনে নির্দেশনা দেন প্রফেসর মামুন আহমেদকে। আন্দোলনে ঘি ঢেলে তাকে আরো চাঙ্গা করতে প্রফেসর মামুন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সাবেক ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে সুপরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে তা ছাত্রলীগের উপর চাপিয়ে শিক্ষার্থীদের আরো খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করেন এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের ছাত্রদেরকে আরো বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ত ও সক্রিয় করা হয়। ফলে ঢাকাসহ সারা দেশব্যাপী আন্দোলন কিছুটা সাংগঠনিক রূপ পেতে শুরু করে। এ কারণেই আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে এসে রাস্তা অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে দেশকে প্রায় অচল করে দেয়ার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলে বিএনপির আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিতকরণের প্রচেষ্টা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। এরইমধ্যে হঠাৎ তারেক রহমানের সঙ্গে প্রফেসর মামুনের ফোনালাপ ফাঁস হলে বিএনপির উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঘটনা জানাজানি হলে এর জন্য লজ্জিত না হয়ে তাকে স্বাভাবিক বিষয় বলে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কোটা আন্দোলনে আমরা সমর্থন দিয়েছি। সেখানে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরের সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা কোটার এই সংস্কারের আন্দোলন করছেন তাদেরকে সমর্থন জানানোর জন্য, সহনুভূতি দেখানোর জন্য কথা বলেছেন। এছাড়া আর কোনো কথা বলেননি। এতে দোষের কি হলো বুঝলাম না।

তবে দলের অন্য এক নেতা এই আন্দোলনের সাথে নিজেদের জড়ানোর সমালোচনা করে বলেন, তারেক রহমান সাহেব মাঝে মাঝেই এরকম ছোটখাটো ভুল করে ফেলেন। এখন সাধারণ মানুষের সামনে খোলাসা হয়ে গেলো, বিএনপির কর্মীরাই ভিসির বাড়িতে ভাঙচুর করেছে। তারাই আন্দোলনের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান ও ছোট করার প্রচেষ্টার সাথে জড়িত। এছাড়া এ ঘটনার পর মানুষ বলতে শুরু করেছে যে, নিজেদের আন্দোলনের সামর্থ নেই বলেই বিএনপি পরগাছার মতো অন্যদের ঘাড়ে ভর করে উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করেছে। সাধারণ মানুষের সামনে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির শেষ সম্মানটুকুও থাকলো না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, বিএনপির ভুলে ভরা রাজনীতি হিসাব করে শেষ করা যাবে না। প্রথমে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচিতে সমর্থন, এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়া, অতঃপর কোকোর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বেগম জিয়ার সাক্ষাৎ না করা আর এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে ষড়যন্ত্র করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করা। সব মিলিয়ে এতবার ভুল করে বেকায়দায় বিএনপি। অপরদিকে দুর্নীতির দায়ে দলীয় প্রধানের সাজাপ্রাপ্তি এবং তৎপরবর্তীতে নেতৃত্ব নিয়ে মতবিরোধ ও দলীয় কোন্দলে জর্জরিত দলটির প্রতি আর আস্থা রাখতে পারছে না সাধারণ মানুষ। এমতাবস্থায় বিএনপির ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *