ইসলামী ব্যাংকের নাম ও মালিকানা পরিবর্তন হচ্ছে

বাংলার দর্পন ডেস্কঃ
বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকের কাঠামোয় আমূল পরিবর্তন আসছে। ব্যাংকের পর্ষদ ও নির্বাহী পর্যায়ে আরও পরিবর্তন হবে। প্রধান কার্যালয়সহ শাখা পর্যায়েও এ পরিবর্তনের ঢেউ লাগবে। ব্যাংক পরিচালনার নীতিমালায়ও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ সবের পাশাপাশি ব্যাংকের নামেও আংশিক পরিবর্তন আনা হতে পারে। এসব বিষয়ে ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পরিষদ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ পরিচালনা পর্ষদ ও পর্ষদ নিয়ন্ত্রিত কমিটিগুলোয় বড় পরিবর্তন আনা হয়। অচিরেই তারা ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন। এরপর থেকে শুরু হবে পরবর্তী পরিবর্তনের পালা। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংকের এ পরিবর্তন সম্পর্কে নতুন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, আমি এখনো দায়িত্ব নিইনি। দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছুদিন ব্যাংকের সার্বিক বিষয় দেখতে হবে। তারপরই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, আমি এর আগেও অনেক ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ইসলামী ব্যাংককে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এ কাজে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি সবার সহযোগিতা চাই।
আরাস্তু খান আরও বলেন, বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক এটি। এর মাধ্যমে যাতে দেশের সেবা করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ইসলামী ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া নতুন এমডি আবদুল হামিদ মিঞা বলেন, এখনো আমি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদনের কাগজ পাইনি। আর কাজে যোগদান করার আগে পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না। আমি একজন ব্যাংকার। সরকারি খাতের বড় বড় ব্যাংকে কাজ করেছি। ফলে বড় ব্যাংক পরিচালনার অভিজ্ঞতা আমার আছে। ইসলামী ব্যাংকে কাজের ধরন একটু ভিন্ন। সেগুলোও আমার জানা আছে। আমি ব্যাংকটিকে প্রফেশনালভাবে পরিচালনা করে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব।
সূত্র জানায়, সরকারের একাধিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে জামায়াত রাজনীতি ঘরানার লোকজনের আধিক্য রয়েছে। ব্যাংক পরিচালনার নীতিতেও ওই ঘরানার রাজনীতিতে বিশ্বাসী লোকদের পক্ষ অনুসরণ করা হয়। ফলে ব্যাংকের কর্মীদের একটি বড় অংশ ওই ঘরানার রাজনীতির পক্ষের লোক। এ ছাড়া ব্যাংক থেকে যেসব নীতি প্রণয়ন করা হয় সেগুলোও তাদের পক্ষে যায়। ব্যাংক সামাজিক দায়বদ্ধতার যে কাজ করে সেগুলোর সুবিধাভোগীরাও ওই ঘরানার। এসব কারণে এ সরকার ক্ষমতায় এসেই ইসলামী ব্যাংকের ওপর একটি বিশদ তদন্ত করে। এর ভিত্তিতে পরে ব্যাংকটি সংস্কারের ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে প্রথমে ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে সরকার সমর্থক লোকদের ব্যাংকের পর্ষদে বসানো হয়েছে। ব্যাংকের এমডি পদে এই প্রথম পরিবর্তন করে একজন সাধারণ ব্যাংকারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ব্যাংকটির নাম হচ্ছে ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’। এই নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড’ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের একটি ব্যাংক, অথচ বাংলাদেশ নামটি রয়েছে শেষ অংশে, এটি হতে পারে না। ব্যাংকটি যে বাংলাদেশের এটি বোঝাতে দেশের নামটিই আগে হওয়া উচিত। সে কারণেই নাম পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা হচ্ছে। তবে নাম পরিবর্তন হলেও ব্যাংকটি পরিচালিত হবে ইসলামী শরিয়াভিত্তিতে। এর নীতিনির্ধারণ হবে দেশের স্বার্থে ও উদ্যোক্তাদের স্বার্থে। গোষ্ঠীর স্বার্থে নয়। এ পরিবর্তনের ফলে ব্যাংকটির আরও উন্নয়ন ঘটবে। নেতিবাচক কিছুই হবে না।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে দেশে কয়েকটি ব্যাংকের নাম পরিবর্তন হয়েছে। নামের পরিবর্তনের ফলে ব্যাংকের কোনো সমস্যা হওয়ার নজির নেই। এর মধ্যে বর্তমানে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের নাম শুরুতে ছিল আল বারাকা ইসলামী ব্যাংক। পরে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ওরিয়েন্টাল ব্যাংক। বর্তমানে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের নাম ছিল সোস্যাল ইনভেস্ট ব্যাংক। বর্তমানে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের নাম ছিল শাহজালাল ব্যাংক।
সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কাঠামোয়ও বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। শুরুতে এর বেশিরভাগ শেয়ার ছিল বিদেশিদের হাতে। বর্তমানে বিদেশিদের হাতে শেয়ারের পরিমাণ কমে গেছে। অনেক বিদেশি তাদের শেয়ার বিক্রি করে চলে গেছেন। দেশি পরিচালকদের মধ্যে জামায়াত ঘরানার লোকেরাও শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন।
গত ২১ জুলাই হজরত শাহজালাল ইন্ডাস্ট্রি সিটি লি ইসলামী ব্যাংক থেকে তাদের পরিচালক পদে নমিনি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা বলে মোট ৩ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৫টি শেয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিক্রির কথা বলে ঘোষণা দেয়। গত ৮ আগস্ট তাদের ৩ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৫টি শেয়ার বিক্রি হয়। এখন আর তাদের পক্ষে কোনো পরিচালক নেই।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ২০১৫ সালের ১০ জুলাই তাদের ৬৭ লাখ ৩ হাজার ৫৪০টি শেয়ারের মধ্যে ৩৭ লাখ ৩ হাজার ৫৪০টি শেয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিক্রির ঘোষণা দেয়। জুলাইয়ের মধ্যে তারা তাদের ৩৭ লাখ ৩ হাজার ৫৪০টি শেয়ার বিক্রি হয়। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর বাকি ৩০ লাখ শেয়ারের মধ্যে ২৯ লাখ শেয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিক্রির ঘোষণা দেয়। ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তারা ২৯ লাখ শেয়ার বিক্রি করে। এর কিছুদিন পর ১০ অক্টোবর তাদের বাকি ১ লাখ শেয়ার ২৯ অক্টোবরের মধ্যে বিক্রি করার কথা বলা হয়। আর ২০ অক্টোবরের মধ্যে তাদের ১ লাখ শেয়ার বিক্রি হয়ে যায়। ফলে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের কোনো শেয়ার আর ব্যাংকে নেই।
ব্যাংকের স্পন্সর ও পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ার ৩ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার ক্রয় করে দিয়েছেন। তিনি ব্যাংকটির সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান।
ব্যাংকের স্পন্সর ও পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. দাউদ খান ৮০ হাজার শেয়ার ক্রয় করে দিয়েছেন।

 

সুত্র- অাজকের সময়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *