‘শেখ হাসিনা যে এত সাহসী তা আমরা বুঝতেই পারিনি’

 

অনলাইন ডেস্ক :

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জেল জীবনের পাঁচ দিন অতিবাহিত হলো। এখন পর্যন্ত তাঁর মুক্তির কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। বরং আজ সোমবার আরও একাধিক মামলায় তাঁকে ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখানো হয়েছে। বিএনপি নেতারা বুঝতে পারছেন না তাঁদের চেয়ারপারসন কবে নাগাদ মুক্তি পাবেন। দলটির সব পর্যায়ের নেতা কর্মীরা হতাশ দিকভ্রান্ত। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তাঁরা স্বীকারও করেছেন যে পরিস্থিতি তাঁদের কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। এরকম পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।

একজন সিনিয়র নেতা আলাপকালে বলছিলেন, ‘ভেবেছিলাম সরকার বোধ হয় বেগম জিয়াকে ভয় দেখাচ্ছে। এখন দেখছি সরকার এতটুকুও সমীহ করছে না দেশের প্রধান বিরোধী দলকে।’

রাস্তায় টিমেতালে লোক দেখানো আন্দোলন আর গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়ানো, এই ছকে বন্দী আজ বিএনপি নেতাকর্মীদের জীবন। কিন্তু এর মধ্যেই কান পাতলে শোনা যায়, শেখ হাসিনার বন্দনা, তাঁর সাহস আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার। ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে বিএনপি নেতা কর্মীরা শেখ হাসিনার দৃঢ়তাকে কুর্নিশ করছেন।

একজন সিনিয়র নেতা, যিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটিরও সদস্য বলছিলেন, ‘শেখ হাসিনার সাহস আছে আমরা জানি। কিন্তু তিনি যে এত সাহসী তা আমরা বুঝতেই পারিনি।’ তাঁর মতে, ‘প্রধান প্রতিপক্ষকে এভাবে জেলে পুরে রাখার সাহস ও চিন্তা ক’জন করতে পারে।’

অন্য একজন নেতা বললেন, ‘আমরা আসলে বোকার স্বর্গে বসবাস করছি। আমরা ভেবেছিলাম বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তার করলে বাংলাদেশ অচল হয়ে যাবে। রাস্তায় লাখো মানুষ নামবে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি।’ এর ব্যাখ্যা দিয়ে ওই নেতা বলেন, ‘তার মানে শেখ হাসিনা আমাদের চেয়ে অনেক অগ্রসর চিন্তার মানুষ। তিনি বুঝেছিলেন বাস্তবে কিছুই হবে না। আমরা কিছু কথাবার্তা বলছি এই আর কি।’

বিএনপির অঙ্গসংগঠনের এক নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা বেগম জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করলেন এখন জেলেও রাখছেন। আমরা কি করতে পারলাম? তাঁর রাজনৈতিক কৌশলে আমরা ভেড়া হয়ে গেছি।’

আলাপকালে বিএনপির একজন কার্যনির্বাহী সদস্য বলছিলেন, ‘দেখেন প্রধানমন্ত্রী দিন শুরু করেন ভোর ছ’টায়, আমাদের ম্যাডাম দিন শুরু করেন ১০টায়। বিচক্ষণতা, পরিশ্রমে আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছি। শেখ হাসিনা বিএনপিকে জামাতের চেয়েও কম গুরুত্বপূর্ণ বানিয়ে ছেড়েছেন। আমরা ভেড়া হয়ে গেছি।’

বিএনপির মাঠ পর্যায়ের কর্মীরাও শেখ হাসিনার সাহস, দৃঢ়তায় মুগ্ধ। এক কর্মীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বলছিলেন, ‘শেখ হাসিনা যা বলেন, তা করে ছাড়েন। এটা মনে হয় ম্যাডাম বুঝতে পারেননি।’

বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা মনে করেন, ‘এই গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনা বেগম জিয়াকে তার সমকক্ষতার স্থান থেকে ছুড়ে ফেলে দিলেন অনেক নিচুতে। এখন বিএনপিকে তার অনুকম্পা নিয়েই বাঁচতে হবে।’

ওই নেতা বলেন, পদ্মাসেতু নিজের টাকায় করা, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া, বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তার। এত সাহস যাঁর, তাঁকে আপনি ঠেকাবেন কীভাবে? আমরা জানি না আগামী দিন তিনি কি চমক দেখাবেন।’ তাঁর মতে, ‘শেখ হাসিনাই এখন ড্রাইভিং সিটে। আমরা শুধুই দর্শক।’

বিএনপির প্রায় সব নেতাই প্রকাশ্যে সমালোচনা করলেও আড়ালে আবডালে বলছেন, ‘বাপের বেটি। একাই আমাদের বেকুব বানিয়ে দিলো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *