রাউজানে ডাবুয়া ইউপি সদস্যকে গণধোলাই

 

 

 

নিজস্ব  সংবাদদাতা :

রাউজানের ডাবুয়া ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যকে পিটুনি দিয়েছে এলাকাবাসী। জানাগেছে, ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিটু শীল প্রকাশ মিটু মেম্বারকে স্থানীয় কিছু নারী পুরুষ এই পিটুনি দেয়। জানাগেছে গতকাল ৩০ জানুয়ারী মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ডাবুয়া ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ধরের দীঘির ঘাট পাড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে ইউপি সদস্য মিটু শীল একই ইউনিয়নের রওশন গোমস্তর বাড়ীর সৌদি আরব প্রবাসী পাবেল মিয়ার স্ত্রী রিনা আক্তার থেকে দুই লক্ষটাকা নগদে ঘুষ নেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। সৌদি প্রবাসী পাবেলের স্ত্রী রিনা আক্তার জানান আমি আমার বাবার বাড়ীতে থাকি। জগন্নাথহাট বাজারের পশ্চিম পাশে আমি ও আমার স্বামীর নামে ক্রয়কৃত নাল জমিতে বসত ঘর তৈরির জন্য গত ৭/৮ দিন ধরে সীমানা প্রাচির নির্মান কাজ করছিল রাজমিস্ত্রিরা। হঠাৎ গত ২৭ তারিখ রাতে রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমার জায়গা পরিদর্শন করে,  পরদিন বিকালে আমাকে ওনার অফিসে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক আমি ২৮ তারিখ বিকালে  উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যায়। যাওয়ার পর তিনি নির্দেশ দেন আপনাদেরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও নির্মিত দেওয়াল তথা স্থপনা ভেঙ্গে ফেলতে হবে। না হলে আইনমত জেলে যেথে হবে। তখন আমি বললাম স্যার আমি বাপের বাড়ীতে থাকতে হয়, জায়গাটিতে ঘর বাধতে না পারলে আমি কোথায় থাকব। সে সময় মেম্বার মিটু আমাদের সাথে ছিলেন। কিছুক্ষন পর আমাদেরকে রুম থেকে বের হয়ে যেথে বললে আমরা বারান্দায় অপেক্ষা করি। ১৫ মিনিট পর মিটু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস থেকে বের হয়ে আমাকে বলে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আড়াই লক্ষটাকা দিতে হবে। টাকা দিলে তোমার জায়গায় ৬ তলা ভবন করলেও কেউ কিছু বলবে না। মেম্বার বলে খবরদার এ কথা কাউকে বললে কিন্তু বড় বিপদ হবে! আমি বললাম এত টাকা কোথথেকে দেব। মেম্বার বলে দিতেই হবে,না হলে ঐখানে ঘর নির্মান করতে পারবেনা। রিনা আকতার বলেন,তখনও আমি জানিনা কেন এবং কি কারনে টাকা দিতে হবে। সমস্যার কথা একবারও আমাকে বলেননি মেম্বার। এরপর ২৯ তারিখ বিকাল ৪টা হতে কিছুক্ষন পর পর মেম্বার মিঠু শুধু ফোন করছে টাকা জোগাড় হয়েছে কি। রাত ৮টা নাগাদ মেম্বার ফোন করে বলে হাতে সময় আর নেই,জলদি টাকা নিয়ে আস। আমি আমার চাচাত ভাই মোহাম্মদ রুবেল আমার ভাতিজা মুহাম্মদ ওসমান ও আমার বোনের ছেলে মোহাম্মদ জাহেদকে নিয়ে জগন্নাথহাট বজারে মেম্বার মিঠু শীলকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে আড়াই লাখটাকার পরিবর্তে দুই লক্ষটাকা প্রদান করি। রিনা আকতার বলেন আমি শুনেছি রাউজানের ইউএনও সাহেব খুব ভাল মানুষ। ওনার নাম ব্যবহার করে মেম্বার মিঠু আমাদের থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছিল। আমি চাই তার বিরুদ্ধে যথাযত শাস্তি হোক।

এরপর আজ (গতকাল) মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমার নাম্বারে ফোন করে বলেন আপনি কি মেম্বারকে টাকা দিয়েছেন। তখন আমি বললাম জ্বি। তখন উপজেলা নির্বাহী বললেন আপনি টাকা ফেরৎ নেন। এর কিছুক্ষন পর মেম্বার মিঠুশীল আমার নাম্বারে ফোন করে বলেন আপনি একটু ইউনিয়ন পরিষদে আসেন,টাকা গুলো নিয়ে যান। আমি বললাম টাকা আমি একা নিতে পারব না যারা টাকা দেওয়ার সময় ছিল তারা সহ লাগবে। এরপর আমরা সকলেই মিলে দীঘির পাড়ে যায়। তখন মেম্বার মিঠু কেন এতটাকা নিয়েছে এলাকাবাসী জানতে চাইলে সে কোন সুদুত্তর দিতে পারেনি। একপর্যায়ে গোটা এলাকায় এ খবর জানাজানি হয়েগেলে অনেক মানুষ দীঘির পুকুড় ঘাটে জড়ো হয়ে যায়। একপর্যায়ে উত্তেজিত এলাকাবাসী তাকে মারতে থাকে। সে সময় আমি টাকাগুলো আমার হাতে নিয়েনি। পরে স্থানীয়রা তাকে ধরে রওশন গোমস্তর বাড়ীর একটি কাচারী ঘরে আটকিয়ে রাখে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনার খবর পেয়ে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেন আগামী শুক্রবার এ ঘটনার একটি নিরসন করব,আপনারা ওকে ছেড়ে দেন। তখন চেয়ারম্যানের অনুরোধে স্থানীয়রা সাদা কাগজে মুচলেখা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। জানাগেছে রাউজান থানার অফিসার সালাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, সে একজনই আমাদের সকলের ইজ্জত ডোবাইল। অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মিঠুর বক্তব্য নিতে বার বার ফোন করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম হোসেন রেজা ফোনে বিকাল ৫টা ১২ মিনিট নাগাদ জানান, এ ইউপি সদস্য চরম অপরাধ করেছে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সে আমার অফিসের নাম ব্যবহার সহ আরো এই ধরনের কোন ঘটনা করেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি পেতেই হবে। জনগন প্রাথমিক শাস্তি তাকে দিয়েছে আমি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। উল্লেখ্য এক সময় নাপিতের দোকানে কাজ করা মেম্বার মিঠু ভোটবিহীন নির্বাচনে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে,একজনের সাথে আরেকজনের নামজারি সহ জায়গা জমিনের বিরোধে লাগিয়ে দিয়ে মোটা অংকের  টাকা হাতিয়ে নেয়ার   অভিযোগ ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *