ফেনীতে সর্বাধিক অালোচিত ঘটনা : কমান্ডার নুরুল অাবছার হত্যা মামলা

 

ফেনী প্রতিনিধি>>

বছরের মাঝামাঝি সময় বেশ আলোচিত হয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল আফছার হত্যা মামলা। স্মরনিকা ও মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারের পর ১৩ এপ্রিল নুরুল আফছারের ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া বাবুল ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত(সোনাগাজী) সিরাজ উদ্দিন ইকবালের আদালতে চার জনের নাম উল্লেখ বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে সরজমিনে তদন্ত ও মুক্তিযোদ্বাদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২৯ সেপ্টেম্বর মামলটি নথিভুক্ত করেন মডেল থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির।

মামলায় সোনাগাজী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ নাছির উদ্দিন (৭৫), সাবেক উপজেলা কমান্ডার মোশারফ হোসেন (৬৬), মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কাশেম (৬০), রাজাকার কমান্ডার শাহজাহান আকবর (৬৭)সহ অজ্ঞাতনামা ৭জনকে আসামী করা হয়েছে।

পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর সোনাগাজী ও ৬ ডিসেম্বর ফেনী জেলা শত্রু মুক্ত হয়। পরে সোনাগাজীর এফএফ কমান্ডার নুরুল আফছার তার সহযোগীদেরকে নিয়ে সোনাগাজীতে অবস্থানরত পাকহানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনমত গঠন করতে তৎপর হয়ে ওঠেন। এসময় মুক্তিযুদ্ধের বিএলএফ গ্রুপের কমান্ডার সৈয়দ নাছির উদ্দিন তার ভাই সোনাগাজীর রাজাকার কমান্ডার শাহজাহান আকবরকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ নাছির উদ্দিন, তার সহযোগী মোশারফ হোসেন, আবুল কাশেমসহ কয়েকজন মিলে যোগসাজসে রাজাকার কমান্ডার ভাইকে বাঁচাতে কৌশলে থানায় নিয়ে রাখেন। নুরুল আফছার রাজাকার কমান্ডার শাহজাহান আকবরকে বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে কমান্ডার সৈয়দ নাছির উদ্দিন ভাই রাজাকার কমান্ডার শাহজাহান আকবরের সঙ্গে যুক্তি করে কয়েকজন মিলে ১১ ডিসেম্বর বিকেল ৩ টার দিকে নুরুল আফছারকে থানায় ডেকে নিয়ে কৌশলে গুলি করে হত্যা করে। পরে তার লাশ গুম করে ফেলা হয়। এসময় নুরুল আফছারের সহযোগীরা তাকে বাঁচাতে গিয়ে আবু তাহের (৭৮) ও দুলাল আহাম্মদ (৭৫) নামে দুই সহযোগী আহত হয়।

পরে হত্যাকারীরা পুরো থানা এলাকায় কারফিউ জারী করে সব কিছু তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। এমনকি তারা নুরুল আফছারের পরিবারের সবাইকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেছিল। নিহত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আফছারের পিতা মৌলভী আহাম্মদ করিম থানায় হত্যা মামলা দিতে চাইলেও হত্যাকারীদের ভয়ে তৎকালীন পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে তিনি ঢাকা গিয়ে তৎকালীন মুজিব বাহিনীর প্রধান শেখ ফজলুল হক মনির শরনাপন্ন হয়ে ছেলের লাশ ফেরত পাওয়ার আবেদন করেন। শেখ ফজলুল হক মনি ও সাব সেক্টর কমান্ডার জাফর ইমাম বীর বিক্রমসহ ফেনী মহকুমার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের হস্তক্ষেপে ১৯৭২ সালের মার্চের ১৫ তারিখে সোনাগাজী থানার পেছনের পুকুরের উত্তর-পশ্চিম পাশ থেকে নুরুল আফছারের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে জানাজা শেষে তুলাতলী গ্রামে তার লাশ দাফন করা হয়।

বর্তমানে আসামীরা জামিনে রয়েছেন। মামলা দায়েরের পর তারা উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের অগ্রিম জামিন নেয়। জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তারা ১৩ ডিসেম্বর ফেনীর আদালতে পুনরায় জামিন চাইলে আদালত নামঞ্জুর করে জেলা হাজতে প্রেরণ করেন। ২৭ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে অবকাশকালীন জেলা ও দায়রা জজ অাদালতের হাকিম মীর রুহুল অামিনএর আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *