‘‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু” – এডভোকেট নাসির উদ্দিন বাহার
শোকবাহ আগষ্ট মাস। আগষ্ট মাস জুড়ে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্নরণ করছে সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মেখ মুজিবুর রহমান। ঘৃনা-ধিক্কার জানাচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশের ঘৃনিত শত্র“দের। ১৯৭৫ সালে এই আগষ্টের মধ্যে ভাগে ঘটে গিয়েছিল বাঙালির ইতিহাসের এক বেদনাবিধুর ও কলঙ্কিত অধ্যায়। ১৫ আগষ্ট নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে। সে দিন বাঙালির স্বাধীনতার মহান এই স্থপতির বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল শ্যামল বাংলার মাটি। জাতির পিতার হত্যার মধ্য দিয়ে একাত্তরের পরাজিত শত্র“রা ও বিষাডক্ত সাপের মতো ফণা তুলে গর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছিল। তাদের কূট-ষড়যন্ত্র আর হামলার শিকার হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ও চেতনা।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রগঠনের বঙ্গবন্ধুর ধারাবাহিক ঐতিহাসিক সংগ্রাম ছিল সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত। এ ব্যাপারে ১৯৬০ এর দশকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিউক্লিয়াস গঠন, পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানাসহ উপযোগী শ্লোগান প্রচার বিশেষ করে ‘জয় বাংলা’র মতো লক্ষ্যভেদী শস্ত্র মরণাস্ত্রে সজ্জিত হানাদার
পাকিস্তানীদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। কোনো ভৌগোলিক অঞ্চলের মানুষ শতসহস্র বছরের নানা উপাদান, নানা ক্ষেত্রের প্রতিভাবানের তাৎপর্যপূর্ণ অবদানে ধীরে ধীরে একটি জাতি হিসাবে বিকাশিত হয়ে ওঠে; এবং কোনো একটা যুগে সেই জাতি তার সামাজিক-সাংস্কৃতিক-মনস্তাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রসত্তাগত চেতনার সর্বোচ্চ স্তরে পৌছে। দেশের সবস্তরের ব্যাপক মানুষের মনে এই সর্বোচ্চ চেতনার স্তর সৃষ্টিতে যে নেতার প্রধান ভূমিকা থাকে এবং সে ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত হয়ে যখন তা একটা যুগ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় তখনই কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠীর মাহেন্দ্রক্ষণ। বাঙালি জাতীর জীবনে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ সর্বোচ্চ চুড়া স্পর্শ করে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ। আর সেই চুড়ার ওপর দাঁড়িয়ে বাঙালি জাতির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষনা করেন: ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’। বাঙালি হাজার বছর ধরে এই ঘোষনার অপেক্ষায় ছিল।
এজন্যই শেখ মুজিব হাজার বছরের শেষ্ঠ বাঙালি।
তিনি বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নের এবং অন্তরের অন্তস্থলে গুমড়ে মারা স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন সেদিন। যুগের দাবিকে সাহস ও শৌর্যে ভাষা দিয়েছিলেন তিনি দখলদার বাহিনীর কামান, বন্দুক ও হেলিকপ্টার গানশিপের যে-কোনো মুহূর্তে গর্জে ওঠার ভয়াল পরিস্থিতির মুখে। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো নেতা এমন ভয়ংকর জটিল পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে এত অকুতোভয় স্বাধীনতার কথা উচ্চারণের সাহস করেন নি। এই নজিরবিহীন ঘটনার জন্যই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রমের অবিসংবাদিক নেতা, নিজস্ব রাষ্ট্রসত্তাগত বাঙালি জাতীর পিতা এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্রষ্ঠা। তাঁর চেয়ে প্রতিভাবান ও বহুগুণে গুণান্বিত বাঙালি অনেকেই ছিলেন; তবু যে তিনিহাজার বছরের শেষ্ঠ বাঙালি ও আধুনিক রাষ্ট্রসত্তার অধিকারী বঙিালি জাতির জনক। তিনি হাজার বছরের বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে জীবনব্যাপী একনিষ্ট সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, কারা-যন্ত্রাণা ভোগ করেই বাস্তব জীবন দিয়ে গেছেন। শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, রাজননীতি, প্রযুক্তি কোকো কিছুই স্বাধীতনার চেয়ে বড় নয়। একটি অসংগঠিত জাতিকে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক লক্ষে সময়োপযোগী মোক্ষম কর্মসূচির মাধ্যমে ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে ঐক্যবদ্ধ করে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে। আধুনিক মারণাস্ত্র সমৃদ্দ দখলদার বাহিনীর কব্জা স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের চারটি ধর্মে বিবক্ত অসম ও অসমন্বিত উপাদানে গঠিত। বাঙালি জাতি এবং প্রায় উনপঞ্চাশটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে একই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অটুট ঐক্যে গ্রথিত করে একটি জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্রষ্টা এবং নগরাজনৈতিক জাতীর পিতা।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে কয়েকশ বছরের যে বাঙালি জাতি গড়ে উঠে তা ছিল একটি নৃগোষ্টী মাত্র। প্রায় তিন দশকের স্বাধীকার ও সুপরিকল্পিত স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাে দশ প্রতিষ্ঠার পর একটি জাতিতে পরিনত হয়েছে। এ জাতির মূল স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাঙালির অভ্যুথান, দীর্ঘ সংগ্রাম-আন্দোলন এবং বাঙালি জাতি নির্মানের কারিগর এর মহকাব্যিক অমরগাথার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের ধারাকে ঘুরিয়ে দিয়ে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করার মতো ঘৃন্য কাজে ঘাতকেরা ততপর হয়েছিল। কিন্তু ওই ঘাতক গুর্বৃত্তরা বাবতে পারেনি বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নন, একটি প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছিলেন বাঙালিকে জাতিকে ঐক্য সূত্রে আবদ্ধ করে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে শিক্ষাবিদ ড: এনামুল হক বলেছিলেন ‘‘বঙ্গবন্ধু হচ্ছে দুহাজার বছরের শেষ্ঠ বাঙালি। তিনি গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের মহান স্থপতি স্বাধীনতার অভিসংবাদিত রূপকার ও মহান ঘোষক। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম ও শ্রেষ্ঠতম কান্ডারি।”
লেখকঃ
সাবেক সভাপতি, জাতীয় ছাত্রলীগ, ফেনী জেলা শাখা।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগ।